সন্দ্বীপে বেড়েছে ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম,প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতের আধাঁরে চর কেটে চলছে মাটি বিক্রির মহোৎসব।

0 ৬৮৮,০৭৪

সন্দ্বীপে বেড়েছে ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম,প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতের আধাঁরে চর কেটে চলছে মাটি বিক্রির মহোৎসব।প্রশাসনকে বার বার অবহিত করার পরও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না অবৈধভাবে মাটি বিক্রেতা দৌরাত্ম।ক্ষমতার জোরে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধভাবে চর কেটে মাটি বিক্রির রমরমা বাণিজ্য।

সন্দ্বীপ রহমতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম সাগড়-পাড় এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণ ব্লক বাঁধের পাশ থেকে জেগে উঠা নতুন ‘চর’ কেটে অবাধে চলছে মাটি বিক্রির ব্যবসা।প্রতিদিন রাত ১২টার থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শতশত ট্রাক এভাবে অবাধে মাটি কেটে নেওয়ায় নদতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র এভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদী ও খাল থেকে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে সন্দ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলোতে।উপজেলা সন্দ্বীপে নদী,খাল ও বিল বেষ্টিত গ্রামেই অহরহ ঘটছে এমন ঘটনা।স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভেকু ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে কাটছে মাটি।নষ্ট করছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। অবৈধভাবে সরকারি জায়গা থেকে মাটি কেটে তা বিক্রি করছে বিভিন্ন ইট ভাটায়।সরকারি জায়গা খাঁস-জমি ও পশ্চিমে জেগে উঠা নতুন চর থেকে মাটি কাটায় ভূমিদস্যুদের পকেট ভারী হলেও পাতলা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ। বড় বড় ট্রাকে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও।নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হলেও পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন নেপথ্যে প্রভাবশালীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় ভূমিদস্যুদের একটি সেন্টিকেট রহমতপুর পশ্চিম চর এলাকায় প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন।চরের মাটি কেটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন ইটভাটায়।এছাড়া বাড়ি তৈরিতে মাটি ভরাট প্রয়োজন হলেও অনেকে এসব মাটি ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হন।অল্প সময়েই মাটি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা রোজগার করেন।দিনে রাত এস্কেভেটর(ভেকু) দিয়ে মাটি কাটা চললেও এ নিয়ে প্রশাসনের কোন তৎপরতা নেই।অথচ মাটি কাটার কোন সরকারি অনুমোদন নেই।

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে,বেশ কয়েক মাস ধরে সন্দ্বীপ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল রহমতপুরে বাঁধ এলাকায় জেগে উঠা চর থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি চক্র।তাদের টার্গেট সরকারি পতিত জমি,খাল বিল ও নদীর চর।এসব জায়গা থেকে দিনের পর দিন মাটি কেটে অনুমোদনহীন ইটভাটা ও পুকুর ভরাট কাজে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,ভেকু মেশিন ও কামলা দিয়ে মেঘনা নদীর পাড় কাটছে এলাকার চিহ্নিত দুই ভূমিদস্যু পারভেজ ও নিজাম।চরের মাটি কাটার ফলে বাঁধ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে হারাচ্ছে পানি আটকানোর ধারণ ক্ষমতা।সেই সাথে গ্রামীণ সড়কের অনেক জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।এছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি গ্রামের সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাটি বোঝায় ট্রাক্টর গুলো।

এবারে আমাদের অনুসন্ধান রাতে ভূমিদস্যুদের চর কেটে মাটি বিক্রির সত্যতা যাচাই করা,তখন সময় রাত-৩টা রহমতপুর বাঁধ এলাকায় দেখা যায়,মেঘনার তীরে জেগে উঠা নতুন চরে সাত-আট জন শ্রমিক মাটি কেটে ট্রাক্টরে তুলছেন।সেখানে কথা হয় মাটি কাটা শ্রমিকদের সাথে তাঁরা বলেন,গত(এক)মাস থেকে এই বাঁধ এলাকায় মাটি কাটার কাজ করছেন তাঁরা।

রহমতপুর ইউনিয়নের খুঁরশিদ সুকানির বাড়ীর- পারভেজ ও মধু নিজামসহ আরো ২-৩জন মিলে মাটি বিক্রির এই ব্যবসা করছেন।প্রতি ট্রাক মাটি ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া রাস্তা,নির্মাণাধীন বাড়ি ও পুকুর ভরাট করার প্রয়োজনে অনেকে এই মাটি কিনে নেন।

এতে করে ওই চক্রের সদস্যরা ফেপেফুলে উঠছেন। মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব মাটিখেকোদের নিয়ে লেখালেখি হলে স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জরিমানাও আদায় করা হয়।কিন্তু কিছুদিন পর আবার সেই তৎপরতা।

অনুসন্ধান বলছে,উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নে অন্তত ৭-৮জন মাটিখেকো প্রতাবশালী রয়েছেন।যারা সবাই সরকার সর্মথিত দলের সাথে সম্পৃক্ত করছেন বলে দাবী করেন,আর এ কারণে শুধু জরিমানা দিয়েই রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন তারা।এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র বলছে,বিগত(২০-২৫)দিন আগে রহমতপুর ইউনিয়নের পশ্চিমে ব্লক বাঁধের পাশে চর কাটার দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে মোঃ পারভেজ কে ৫০ হাঁজার টাকা জরিমানা করা হয়।এখন প্রশ্ন হচ্ছে আইনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে এখনো তারা কিভাবে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধভাবে চর কেটে মাটি বিক্রির ব্যবসা।পর্দার আড়ালে থেকে কারা পরিচালনা করছেন এ ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট কে?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,পারভেজ ও নিজাম গংরা যেভাবে নদীর চর কেটে বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে নদীর গতিপথ বদলে সামনের বর্ষায় নদীর বাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত রাস্তাটি ভেঙে যেতে পারে।আর সরকার কোটি টাকা বেয়ে বন্যার তীব্রতা থেকে সন্দ্বীপবাসী কে রক্ষার করার জন্য যে ব্লক বাঁধটি নির্মাণ করেছে তা কিছু অসাধু ব্যক্তি চর কেটে মাটি বিক্রি করে সাময়িক লাহবান হওয়ার আশায় সেটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ ব্লক বাঁধ ভেঙে গেলে এলাকার ঘরবাড়ী,কৃষিজমি ও রাস্তাঘাট নদে বিলীন হবে।প্রশাসনের উচিত অতি দ্রুতই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

বিষয়’টি নিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরকারি কমিশনার(ভূমি)মাইনউদ্দিন বলেন,আমরা সারা সন্দ্বীপে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনকারী অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।এবং আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে,সন্দ্বীপের অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনকারীদের আমরা নজরদারিতে রেখেছি, আমরা অভিযোগ পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!