সন্দ্বীপ উপকূলে গোলাগুলিতে নিহত ২

0 ৮৭৫,৪৮৫

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপূকলে দুটি জলদস্যু বাহিনী ও কোস্টগার্ডের পাল্টাপাল্টি গোলাগুলিতে ২ জলদস্যু নিহত হয়েছেম। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ২ জলদস্যু।বুধবার(২৭ সেপ্টেম্বর)ছয়টার দিকে নোয়াখালী চরাঞ্চলের কাছাকাছি মেঘনা নদীর মোহনা ও সন্দ্বীপ উপকূলে এ ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি জানাজানি হয় আজ বৃহস্পতিবার।

নিহতরা হলেন,নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরভাটা এলাকার নাছির উদ্দীনের ছেলে আব্দুর রহমান(৩৫) ও নোয়াখালীর চরজব্বর এলাকার রেজাউল হকের ছেলে রাজু।অপরদিকে আহতরা হলেন,সুবর্ণচরের রেণু মিয়ার বাজারের মোস্তফার ছেলে নুর হোসেন(৩৩) ও চর আলাউদ্দিনের মৃত আ. রহিমের ছেলে ইসমাইল(২০)।তারা দুজন চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় সন্দ্বীপের সারিকাইত কোস্টগার্ড আউটপোস্টের কন্টিজেন্ড কমান্ডার মহিউদ্দিন বাদী হয়ে ১১০-১৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সন্দ্বীপ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।মামলায় সরকারি কর্মচারী ও প্রতিপক্ষের লোকজনদের হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখমের অভিযোগ আনা হয়েছে।মামলাটি তদন্তের ব্যবস্থা করবেন সীতাকুণ্ডের কুমিরা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ।

মামলা সূত্রে জানা যায়,গতকাল ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটায় সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের কালিরচর এলাকায় উপজেলা মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা অবৈধ চরঘেরা জাল উচ্ছেদ অভিযানে যান।ওইসময় নদীতে ভাটা ছিল৷এতে নৌকা চরের বালিতে আটকে যায়।নৌকার মাঝি জানায় জোয়ার না আসা পর্যন্ত নৌকা সরানো যাবে না।তখন চরে অবৈধ স্থায়ী স্থাপনা ও চরঘেরা জাল নিধনে অভিযান চলছিল।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় চরের পূর্ব দিক থেকে ৬০-৭০ জন ও পশ্চিম দিক থেকে ৫০-৬০ জনের দুটি জলদস্যু বাহিনী নদীতে জাল বসানোকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গোলাগুলি ও মারামারিতে লিপ্ত হয়।একপর্যায়ে জলদস্যুরা প্রশাসনের লোকজনকে লক্ষ্য করে বালু,কাদা ও মরিচের গুড়া ছুড়তে থাকে।পরে দেশীয় দা,রামদা ও বন্দুক নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা করে।এতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও কোস্টগার্ডের ৩ জন আহত হন।

একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মৎস্য কর্মকর্তার নির্দেশে কোস্টগার্ড খোলা আকাশে ১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।এতে জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।পরে ১০০ গজ পশ্চিমে দেখা যায় ৪ জন কাটা রক্তাক্ত জখম,গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকে।পরে তাদেরকে উদ্ধার করে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুর রহমান ও রাজুকে মৃত ঘোষণা করেন।অপর দুজনকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের গণমাধ্যম কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তাহসিন রহমান এর সাথে মুঠোফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন,কোস্টগার্ড ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানের সময় সেখানে দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়।তারা সেখানে চারজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।২৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২ টা ২০ মিনিটে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তারা।এসয়ম চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্য দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। নিহত দুজন গুলিবিদ্ধ ছাড়াও তাদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের কোপ আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।একইসাথে আহত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে সন্দ্বীপ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনেও অসংখ্যবার কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি।তবে সন্দ্বীপ থানার ওসি মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন,গোলাগুলিতে ২ জন নিহত হয়েছেন সত্য।২ জন গুলিবিদ্ধও হয়েছেন।তবে এ ঘটনার এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। এ ঘটনায় কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে ১১০-১৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে উঠে আসবে ঘটনার মূল রহস্য।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!