আখাউড়ায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিষ প্রয়োগে হত্যা,আটক এক।

0 ৯৬

আখাউড়া প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়ায় রুনা আক্তার (১৭) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিষয় জাতীয় দ্রব্য (কেরুর বড়ি) প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। নিহত রুনা আক্তার উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের রানীখার গ্রামের আবু কাউছার মিয়ার মেয়ে। সে এবছর রানীখার এসএ হান্নান বহুমুখি ও কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে দুইজনকে আসামী করে বৃহস্পতিবার আখাউড়া থানায় একটি মামলা করেছেন। নিহতের স্বজনরা মামলার ১নং আসামী রানীখার গ্রামের মৃত আব্দুল রাকিবের পুত্র সৈয়দ মনির হোসেনকে (২৪) আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে। অপর আসামী হলো একই গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে মোঃ লোকমান (৪০) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ময়না তদন্ত শেষে রুনার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে বুধবার রুনাকে সকালে বিষ খাওয়ালে ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

মামলার অভিযোগ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সনের মে মাসের ১৭ তারিখ মনির হোসেন ফুসলিয়ে পরিবারের অগোচরে বিয়ে করে। এ বিষয়ে রুনার পরিবার আদালতে মামলা করলে স্থানীয়রা বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেয়। গত ৬ মাস আগে (২০২১ সনের জুন মাসের ৩ তারিখ) তাদের যৌথ তালাক দিয়ে রুনাকে পিত্রালয়ে নিসে আসে। পরে মনির হোসেন মোবাইল ফোনে রুনার সাথে যোগাযোগ করে তার সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। বুধবার সকালে মনির হোসেন রুনাকে ডেকে নিয়ে কেরুর বড়ি খাইয়ে দেয়। রুনা আক্তার ছটফট করতে থাকলে মনির হোসেন তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রুনার পরিবারের লোকজন হাসপাতালে ছুটে যায়। সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে রুনার মৃত্যু হয়।

বৃহস্পতিবার বিকালে রুনার বাড়ি গিয়ে দেখা যায় মরদেহ ধোয়ানো হচ্ছে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। সবার চোখে মুখে বিষাদের ছায়া। রুনার মা দু’হাত বুকে চাপড়ে মেয়ের নাম জপতে জপতে মুর্চ্ছা যান। বাবা আবু কাউছার হাউমাউ করে কান্না করেন।

রুনার চাচা মোহাম্মদ মুছা বলেন আমি হাসপাতালে গিয়ে মনির হোসেন পেয়ে জানতে চাই সে কেন রুনাকে কেরুর বড়ি খাইয়েছে। জবাবে মনির হোসেন বলে ‘আমি যেহেতু রুনার সাথে সংসার করতে পারছি না, তাহলে আমি তাকে কারও সাথে সংসার করতে দিমু না। এজন্য আমি তাকে টেবলেট খাইয়েছি। এসময় একটি টেবলেট খাওয়ায় বলে স্বীকার করে। এসময় রুনা কাঁদতে কাঁদতে বলে- আমি বাঁচতাম না। আমাকে কেরুর বড়ি খাইয়েছে। তার সাথে আরও ২/৩ জন সহযোগি ছিল।

রুনা আক্তারের বাবা আবু কাউছার বলেন, ‘আমার মেয়ে মৃত্যুর আগে আমাকে বলেছে, মনির হোসেন জোর করে তাকে কেরুর বড়ি খাইয়েছে। এবং মনির হোসেন নিজেও আমাদের কাছে স্বীকার করেছে সে আমার মেয়েকে বড়ি খাইয়েছে। পূর্বের ক্ষোভের কারনেই সে আমার মেয়েকে বিষ খাইয়েছে। আমি ন্যায় বিচার চাই। এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।’

কেরুর বড়ির সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, চালের মধ্যে কিরি পোকা হয়। এ পোকা চালকে পাউডার বানিয়ে ফেলে। সেজন্য অনেক অসচেতন লোক ফস টকসিন (বৈজ্ঞানিক নাম) চালে দেয়। এটি বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে। এ বড়ি কেউ খেলে মারা যাবে।

এ ব্যপারে আখাউড়া থানার ওসি মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় আটক আসামীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!