আপন বড় ভাইকে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী দীর্ঘ ৩০ বছর পর আটক।

0 ৫০৬,৬০৪

ফেনীর ছাগলনাইয়া’য় আপন বড় ভাইকে দা দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী আবুল খায়ের’কে দীর্ঘ ৩০ বছর পলাতক থাকার পর চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া এলাকা হতে আটক করেছে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম।

নিহত ভিকটিম আবু তাহের এর সাথে তার আপন ছোট ২ ভাই আবুল খায়ের এবং আব্দুল কাদের এর পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ-বন্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক অশান্তি ও দ্বন্ধ চলে আসছিল।এরই জের ধরে এক পর্যায়ে আসামী আবুল খায়ের(মেজো ভাই)এবং আব্দুল কাদের(ছোট ভাই)তাদের বড় ভাইকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।

গত ২৭ জুন ১৯৯৩ ইং তারিখে সম্পত্তির ভাগ-বন্টন নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আসামী আবুল খায়ের এবং আব্দুল কাদের তাদের বড় ভাইকে ধারালো দা দিয়ে ঘাড়ে নির্মমভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরবর্তীতে গুরুতর আহত ভিকটিমকে হাসপাতালে নেয়ার পথেই তিনি মৃত্যু বরন করেন।

পরবর্তীতে এ ঘটনায় নিহত ভিকটিমের বোন আমেনা বেগম বাদী হয়ে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানায় আবুল খায়েরকে ১নং এবং আব্দুল কাদেরকে ২নং আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ০৫; তারিখ: ২৭/০৬/১৯৯৩; জিআর ৪০/৯৩; ধারা ৩০২/৩৪; পেনাল কোড-১৮৬০।

পরবর্তীতে আবুল খায়ের এবং আব্দুল কাদের এর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচারকার্য শুরু হয়।বিচারকার্য চলাকালীন সময়ে আসামীরা জামিনে গিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।আসামীরা দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত পুলিশের তদন্ত এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষে আসামীদের অনুপস্থিতিতে ভিকটিম আবু তাহেরকে হত্যার দায়ে আসামী আবুল খায়ের এবং আব্দুল কাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন।

র‌্যাব-৭,চট্টগ্রাম বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীঘদিন যাবৎ পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭,চট্টগ্রাম জানতে পারে, বর্ণিত হত্যা মামলার ১নং আসামী মোঃ আবুল খায়ের আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া এলাকায় অবস্থান করছে।

উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭,চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ০৩ মে ২০২৩খি. তারিখ আনুমানিক ১৯০০ ঘটিকায় বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ আবুল খায়ের, পিতাঃ মৃত অলি আহম্মেদ,সাং দক্ষিন বল্লভপুর থানাঃ ছাগলনাইয়া জেলাঃ ফেনীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করেগ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও স্কীকার করে সে পারিবারিক অশান্তি ও পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ-বন্টনের দ্বন্ধে আপন বড় ভাইকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাবাসাবাদে জানা যায়, বর্ণিত হত্যাকান্ডের পর আসামী মোঃ আবুল খায়ের গত ২৮ জুন ১৯৯৩ তারিখ হতে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা এলাকায় ২ বছর পালিয়ে থাকেন।পরবর্তীতে সে শশুর বাড়িতে গেলে পুলিশ খোজাখুজি করায় সে আসাম দিয়ে ভারত যাওয়ার পথে বিএসএফ এর কাছে গ্রেফতার হয়। শিলং কারাগারে ০৬ মাস থাকার পর সে বাংলাদেশে আসে।সিলেটে ০৬ মাস কাটানোর পর চট্টগ্রাম জেলার রাংগুনিয়া থানার কমলাছড়ি এলাকায় ০৩ বছর বসবাস করে। এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে মিজান নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে।এরপরে সে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার কামাল বাজার এলাকায় দীর্ঘ ২৪ বছর যাবত মিজান নামে দিনমজুর ও অটোরিক্সা চালিয়ে বসবাস করে আসছে।রাংগুনিয়া ও পটিয়ায় তাকে স্থানীয়রা মিজান নামেই চিনে।দীর্ঘ ৩০ নছর সে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন থেকে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখেন।এভাবে সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে প্রায় দীর্ঘ ৩০ বছর নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি পূর্বক বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পেশায় আত্মগোপনে ছিল।গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!