খুটাখালীতে নির্বাচনী আচরনবিধি মানছেনা, সুর-ছন্দে প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনা

0 ৭৭

কক্সবাজার প্রতিনিধি– আমরা সবাই একজোট,নৌকা মার্কায় দিব ভোট। পেট ভরে ভাত খাবো, মোটর সাইকেল মার্কায় ভোট দিবো। পরিবর্তনের শপথ নিন, আনারস মার্কায় ভোট দিন। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের স্লোগানগুলো এমনই মধুমাখা। এসব স্লোগানে নিজের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার আকুতি। আবার বিষমাখা স্লোগানেরও অভাব নেই। আঙ্গুরে ফরমালিন, আনারস মার্কায় ভোট দিন। নতুন দিনের নতুন আলো, রহমান ভাই প্রার্থী ভালো’। ভোট দিবা ভাই ফাল মারি, মার্কা আঁরার ভ্যানগাড়ি। ‘উন্নয়নে তারেক ভাই, তার জন্য ভোট চাই’। ভুল মার্কায় দিলে ভোট, কষ্টে থাকবে এলাকার লোক। মনজুর ভাই দেশ ও দশের, আনারস তো মিষ্টি রসের।

চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে মিলছে এ রকম হরেক রকমের সুর। স্লোগানে মিলছে ছন্দও। সেই সাথে কোথাও কোথাও আবার নির্বাচনের সুরে ভাসছে পরিচিত গানের কলি ও আঞ্চলিক ভাষায় গানও।

প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে খুটাখালী বাজারের অলিগলিতে মাইকে ভেসে আসছে এমন ছন্দময় সব শব্দ। এর মাধ্যমেই প্রতিদিন সকাল থেকেই চলছে প্রার্থীদের মাইকিংয়ে প্রচারণার মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা! ভোটারদের মন জয় ও নজর কাড়তে এভাবেই প্রার্থীরা চালাচ্ছেন তাদের নির্বাচনী প্রচারণা।

খুটাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ভিন্ন কিছুর প্রতি মানুষের সবসময় আলাদা আকর্ষণ থাকে। নির্বাচনে ভোট পাওয়ার বিষয়টি ভোটারদের মন জয়ের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। বিষয়টি মাথায় রেখে মাইকিংয়ে রসালো ও আকর্ষণীয় স্লোগান দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আশা করছি এতে ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাব।

ইউনিয়নের দু’বারের নির্বাচিত ও বর্তমানে মোটর সাইকেল মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী মুহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, ভোটারদের মন জয়ের লক্ষ্যে নানা মাধ্যমকে বেঁচে নেই প্রার্থীরা। এর মধ্যে একটি হলো প্রচারণায় মাইকিংয়ে চমকপ্রদ স্লোগান ও সুর-ছন্দ। স্লোগান নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে এক প্রকারের প্রতিযোগিতাও হয়। যে প্রার্থীর স্লোগান যত বেশি ভোটারদের আকর্ষণ করতে পারবে, সেই প্রার্থীই প্রচারণায় সফল হবে।

আনারস মার্কার স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব অধ্যক্ষ এসএম মনজুর বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের মাইকিংয়ে রসালো স্লোগানে সকাল থেকে পুরো এলাকা মাতিয়ে থাকছে। ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য প্রার্থীরা কেউ আঞ্চলিক ভাষায় কেউবা অন্য কোনো পন্থায় দিচ্ছেন স্লোগান। এসব স্লোগান ভোটারদের বেশ নজরও কাড়ছে।

চশমা মার্কার অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী মুহাম্মদ রিহাবুল আলম বলেন, আঁআর ভোট আঁআই দিয়ুম, কেয়ারে কিছু নঅ হইয়ুম।

তবে রসালো স্লোগান, ছন্দ ও গান গুটি কয়েক প্রতীকের সাথে গেলেও এবারের নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা ও সাধারণ মেম্বারদের জন্য বরাদ্দ করা লাটিম, ঘুড়ি, ভ্যানগাড়ি, তাল গাছ, সুর্যমুখী ফুলসহ বেশিরভাগ প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন প্রার্থীরা। এমনকি প্রার্থীদের ব্যক্তি ইমেজও অনেক ক্ষেত্রে ম্লান হচ্ছে।

আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে খুটাখালী ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনি দিন ঘনিয়ে আসায় ইউনিয়নে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। এলাকা জুড়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার ছেয়ে গেছে নির্বাচনি এলাকা।

তবে এ ক্ষেত্রে (দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত) মানা হচ্ছেনা নির্বাচন অফিসের দেওয়া বিধি নিষেধ। এমনকি বিধি নিষেধ প্রয়োগে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা চোখে পড়েনি।

সরোজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের তারা দিচ্ছেন নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি। প্রার্থীদের ব্যানার পোষ্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রচারণা। নির্বাচন কমিশনের আইন রয়েছে প্রার্থীদের পোষ্টার রশি দিয়ে টানানোর কথা। কিন্তু সেটা কেউই মানছে না। স্কুলের দেওয়াল, ঘরের দেওয়াল, কবরস্থানের দেওয়াল, শৌচাগার, গাছেও প্রার্থীদের পোষ্টার লাগানো হয়েছে। প্রার্থীদের দাবি তারা আচরণবিধি মেনেই পোষ্টার লাগাচ্ছেন।

তবে একাধিক প্রার্থীদের দাবী তারা কর্মীদের নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। অবাধ সুষ্ঠ নিরেপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তারা বিজয়ী হবেন এবং তাদের কর্মীরা বিধি মেনেই নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলাতে রির্টানিং কর্মকর্তা রয়েছে। সেই সঙ্গে কাজ করছে নিবার্হী ম্যাজিস্টেট। অচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!