দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে করুন দশায় জীবন যাপন লালপুরের মোস্তফার

0 ৯৯
মিঠুন ইসলামঃ মানব জনম বড়ই বিচিত্র,বৈচিত্রতায় এর রীতিনীতি। কারও জন্ম রাজার রাজ প্রাসাদে সোনার চামুচ মুখে নিয়ে আবার পৈত্রিক সুত্রেও যা পায় তা সাত পুরুষ বসে খেলেও ফুরায় না। আবার কারও জন্ম দুঃখীর শীর্ন কুঠিরে বুক ভরা ব্যথা নিয়ে পৈত্রিক সুত্রে পায় উপেনের ন্যায় মরিবার মত ঠাই। প্রিয়ার সমাধীতে তাজমহল রচিতে কার না সাধ জাগে,কিন্তু সাধ্য কোথায় ?তেমনি মোস্তফারও সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নাই জন্ম থেকেই কপাল পোড়া। ছোট বেলাই কিছু বুঝে উঠার আগেই পিতাকে হারিয়ে বড় অসহায় হয়ে পড়ে মোস্তফা,তাই লেখাপড়া কপালে জুটেনি তার।অন্য দশজন ছেলের মত তারও ইচ্ছা ছিল দল বেধে স্কুলে যাবে লেখাপড়া শিখবে খেলাধুলা করবে,বাবার আদর-সোহাগে বড় হবে কিন্তুু বাল্য বয়সে তাকে লেখাপড়ার বদলে পরের জমিতে কামলা খাটতে হয়েছে। মোস্তফা আলী(৬৭)’র জন্ম মৃত আব্দুল কুদ্দুস আলীর কুড়ে ঘরে,নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে। ১ছেলে ও ১মেয়ে নিয়ে পৈতিক সুত্রে পাওয়া ২শতাং জমি ছাড়া আর কিছু নাই মোস্তফার। দীর্ঘ ৪৬-৪৭ বছর ধরে এক পায়ের উপর ভর করে চালাফেরা সহ সাংসারিক কাজ-কর্ম করে। মোস্তফা জানান ৪৬-৪৭বছর পূর্বে জীবিকার সন্ধানে নওগা জেলার আত্রাই ধান কেটে বাড়ী ফেরার পথে নাটোরের লালপুরে আজিম নগর রেলষ্টেশনে ট্রেন থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়ে ডান পা কেটে যায়। চিকিৎসা বাবদ পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া যা কিছু সর্বচ শেষ করেও পা ফিরে পাইনি।তাই এক পায়ের উপর ভর করে জীবনের বোঝা বয়ে চলছে ৪৬-৪৭ বছর ধরে। অনেক চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারেনি তার ডান পা। বাড়ী ফিরে হতাশায় মা গুলজানকে নিয়ে প্রায় অর্ধহারে-অনাহারে জীবিকা নির্বাহ চলে কয়েক বছর। তবুও জীবন যুদ্ধে হার মানেনি মোস্তফা। জীবিকার তাগিদেই বেছে নেয় মানুষের ক্ষেত খামারে কাজ-কর্ম,নিজের চেষ্টায় বাড়ীর অঙ্গিনায় লাগানো খেজুর গাছ শীতকালে চাচ দিয়ে রস বের করে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রয় করে। মোস্তফা বলেন, আমি প্রতি বছর শীতকালে মানুষের বাড়ীতে এক পায়ে ও হাতের উপর ভর করে ৪০থেকে ৫০টা করে খেজুর গাছ লাগায়ে সংসার চালায়ে আসছি।বয়সের ভারে এখন আর বেশি কাজ করতে পারি না,তবুও বাঁচার তাগিদে এখনো লাফিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠতে হয়। আমার ছেলে রবিউল এবং মেয়ে চাম্পাকে বিবাহ দিয়েছি এক পায়ে ও হাতের পরিশ্রম করে।মোস্তফার সামনে এখন দূর ধুয়াশার মত সুবিশাল ছায়া পথ।শেষ জীবনে কিভাবে পাড়ি দিবে এই আধারের জীবন।তাই সে দূরচিন্তা ও রোগে-শোকে নুয়ে পড়েছে।মোস্তফা শেষ জীবনে বেঁচে থাকার জন্য সকলের নিকট সহযোগিতা কামনা করেন। এবিষয়ে দুড়দুড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফা বলেন,মোস্তফা একজন অসহায় ব্যাক্তি,দূর্ঘটনায় পা হারিয়ে কোন মতে দুঃখ কষ্টে সংসার চালিয়ে বেঁচে আছে।এখন বৃদ্ধ বয়সে সে খুবই অসহায়,বর্তমানে তাকে সাহায্য সহযোগিতা করা একান্ত প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব তাকে সহায্য করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!