যশোরের চৌগাছায় টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা, কৃষকের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি

0 ৯৭

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: টানা বর্ষণে যশোরের চৌগাছার চাষীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরিষা, মসুর, গোলআলু, পেঁয়াজ, মরিচসহ সব ধরনের সবজি চাষীদের এক প্রকার মাথায় হাত। এখনো যেসব চাষী ধান ঘরে তুলতে পারেননি তাদের ছাড়াও যারা বোরোর বীজতলা তৈরি করেছিলেন তারাও পড়েছেন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) রাশেদুল ইসলাম বলেন, সোমবার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত তাদের হিসেবে ১১.২৫ হেক্টর বোরো বীজতলা, ১০ হেক্টর মসুর, ২.৫০ হেক্টর গম, ৫০ হেক্টর সরিষা, ৪০ হেক্টর বিভিন্ন ধরনের সবজি, ৪৭ হেক্টর গোলআলু, ১৫ হেক্টর পেঁয়াজ, ১২ হেক্টর মরিচ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি জানান, উপজেলার ৩০ হেক্টর বোরো বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। রাতের মধ্যে পানি নিস্কাশন না হলে বা আরো বৃষ্টি হলে এই ৩০ হেক্টরের সাথে আরো বেশি পরিমাণ বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়াও এই বৃষ্টিতে গোলআলু সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও তিনি জানান।
পৌরসভার বেলেমাঠ গ্রামের আজগর আলী মুঠোফোনে জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ এবং এক বিঘা গোলআলু লাগিয়ে ছিলেন। এতে শুধুমাত্র বীজ কিনতে খরচ হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। এছাড়া সার, শ্রমিক এবং জমির খরচ তো আছেই।
তিনি জানান, আমার জমির ওপর দিয়ে এখনো পানির স্রোত যাচ্ছে। আমার সম্পূর্ণ ফসল নষ্ঠ হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, তিনি যে মাঠে এই আবাদ করেছেন সে মাঠের এক থেকে দেড়শ বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
একই গ্রামের হানেফ আলী জানান, তিনি বাঘারদাড়ি মাঠে এক বিঘা সরিষা করেছিলেন। সরিষায় ফুলও এসেছিলো। বৃষ্টিতে সব নষ্ঠ হয়ে গেছে।
এদিকে উপজেলার কয়ারপাড়া, টালিখোলা, সিংহঝুলি, বাড়িয়ালি, পাশাপোলসহ বিভিন্ন মাঠে কেটে জালি দিয়ে রাখা বা মাঠে কেটে রাখা ধান টানা বর্ষায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
সিংহঝুলি গ্রামের আব্দুস সাত্তার মন্ডল জানান, তার সিংহঝুলি পশ্চিমপাড়া মাঠে কেটে রাখা ধান সম্পূর্ণ পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে।
চৌগাছায় টানা বর্ষণে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। শনিবার থেকে স্বল্পমাত্রায় বর্ষণ হলেও রবিবার সারাদিনের পর রাতে এবং সোমবার সারাদিনের টানা বর্ষণে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ ছাড়াও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা
সোমবার চৌগাছার হাটবার হওয়ায় সাধারণ মানুষের ভীড় থাকে সর্বত্র। তবে এদিনও সকাল থেকেই মাঝারী মানের টানা বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বাজারের দেড় হাজারের বেশি দোকানপাটের অধিকাংশই বন্ধ ছিলো। এমনকি চৌগাছা-যশোর রুটের বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিনের মতো শহরে ছিলো না থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকের ভিড়। মাত্র দু’ একটা ভ্যান ছাড়া ছোট ছোট যানবাহন ছিলো না বললেই চলে।
ভ্যান চালক শুকুর আলী বলেন, টানা বর্ষণে সবচে ক্ষতিগ্রস্থ আমরা যারা দিনআনি দিন খাই। আজ দুদিন ভ্যান চালানো বন্ধ রয়েছে। আজ তো ভ্যানই বের করতে পারিনি
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বর্ষণে চৌগাছা শহরে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার থেকে রবিবার সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টির পর রবিবার সারারাত মাঝারি মানের বৃষ্টি হয়। সোমবার এ রিপোর্ট লেখার সময় বিকেল ৪টা পর্যন্তও চলছিলো টানা বৃষ্টি।
এতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাকপাড়া, ঋষিপাড়া, কাজী অফিসপাড়া ছাড়াও নিরিবিলি পাড়াসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের নিচু এলকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব এলাকার সোলিং ও কংক্রিট রাস্তার ওপর কোথাও কোথাও হাটুপানি পর্যন্ত জমে যায়।
শহরের বিভিন্ন এলাকার বাড়তি পানি জমা হতো নিচু এলাকা ও কয়েকটি পুকুরে। জমির মালিকরা সেসব পুকুর ভরাট করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করায় পানি বের হতে না পেরে সেটা রাস্তার ওপর জমা হয়ে যাচ্ছে।
ঋষিপাড়ার জুয়েল রানা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বৃষ্টি হলে আমাদের সোলিং রাস্তার ওপর পানি জমে যায়। পানি বের হবার কোনো উপায় না থাকায় রাস্তার কোথাও হাটুপানি, কোথাও তারও বেশি পানে জমে যায়।
চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল বলেন, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যা দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে পানি জমে। নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে পানি নিস্কাশনে আর সমস্যা হবে না।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!