শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।

0 ৫১০,০৪৩

বাংলাদেশের উন্নয়নের কারিগর ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী এবং অসহায়,গরিব-দুঃখী মানুষের আশ্রয়স্থল সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন আজ বুধবার(২৮শে সেপ্টেম্বর)।বাংলাদেশের সফল এ রাষ্ট্রনায়ক ৭৫ পেরিয়ে আজ ৭৬তম বছরে যাত্রা শুরু করছেন।দেশরত্নের অনুপস্থিতিতেই ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে দেশব্যাপী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উৎসবমুখর পরিবেশে নান কর্মসূচি পালন করবে।

১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি তিনি।বঙ্গবন্ধুর মতোই দূরদর্শী ও নেতৃত্বগুণ দিয়ে নিজেকে সমাদৃত হয়েছেন বিশ্বব্যাপী।

১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ওই বছরের ২৩শে জুন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।এরপর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয়ের পর ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা।তারপর আরও দুটি নির্বাচন এলো,বঙ্গমাতা তনয়া শক্ত হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ বাংলার।

যদিও এতো সহজ ছিল না শেখ হাসিনার পথচলা। ছোটবেলা থেকে বাবার সান্নিধ্যে পাননি তিনি।পিতা মুজিব তখন ব্যস্ত দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে, খাটছেন জেল-জুলুম।১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দীর্ঘ সংগ্রামের অবসান হয় বঙ্গবন্ধু পরিবারের।স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি দেশে ফেরার পর ১৯৭৫ সালে ১৪ই আগস্ট পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করেন পরিবারের সান্নিধ্যে।পরদিন দেশের মাটিতে ঘটে যায় সবচেয়ে বড় ন্যক্কারজনক ঘটনা।

কিছু অসাধু সেনা কর্মকর্তার এক সামরিক অভ্যুত্থানে হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা রেহানা ছাড়া নিহত হন তার পরিবারের সবাই।ভোরের আলো অন্ধকার হয়ে নামে শেখ হাসিনার জীবনে।এরপর ২১ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ১৯৯৬ সালে এ দের কাণ্ডারী হন তিনি।

এর আগে ১৯৫৪ সাল থেকে ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন শেখ হাসিনা।১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন।বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী থাকা অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন।১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী গ্রেফতার করে।এ সময় হাসিনা তার বাবার সাথে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসাতেই ছিলেন।শেখ হাসিনার জ্যেষ্ঠ সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও ছোট সন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রধানের রাজনৈতিক জীবন প্রায় ছয় দশকেরও বেশি সময়ব্যাপী বিস্তৃত। আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে।ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দেশে ফিরে আসেন।

শেখ হাসিনা স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন ও ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।এর মধ্যে তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ ও ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

তারপর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে তিনি বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন।বিরোধী দলে থাকার সময় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকায় এক জনসভায় তার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়।তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।এ হামলায় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ১৯ জন মৃত্যুবরণ করেন ও শতাধিক আহত হন।এই গ্রেনেড হামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে করার জন্য ‘জজ মিয়া’ নাটকসহ বেশকিছু প্রহসন সৃষ্টি করেছিল তৎকালীন চারদলীয় ঐক্যজোট প্রশাসন।

পরবর্তীতে দেশি ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সুষ্ঠু তদন্তে বেরিয়ে আসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান,তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর,বিএনপি নেতা নাসিরুদ্দিন আহমেদ পিন্টু,যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ, জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নানসহ বেশকিছু তৎকালীন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম।তারা এ হামলার নেপথ্যে ছিলেন।

এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন ২০০৭ সালে।২০০৮ সালে জেল থেকে মুক্তিলাভের পরে তিনি চিকিৎসার্থে কয়েক মাস বিদেশে অবস্থান করেন। এরপর দেশে ফিরে দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেন।এ বছর নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন।গত ১৪ বছর ধরে শেখ মুজিব ও বেগম মুজিবের হাসু দৃঢ় চেতনায় দেশের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত।ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০১৭ সালে তিনি ছিলেন ৩০ তম।২০১৮ সালে ২৬,২০১৯ সালে ২৯ ও ২০২০ সালে তার অবস্থান ছিল ৩৯ তম স্থানে।এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন।

বিশ্বের নানা দেশ থেকে সম্মান সূচক ডিগ্রি অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা।যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি,ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়,জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়,ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়,অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি,ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়,রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে ডিপ্লোমা প্রদান করে।

শেখ হাসিনা ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় ৭ম স্থানে ছিলেন।যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারী নেতৃত্বের ১২ জনের তালিকায় নির্বাচিত হন।২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা দশ ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থানে হয়েছিলেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে।তার সাহসিকতা,বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু আজ উত্তাল পদ্মার বুকে জাতির গৌরবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তিনিই বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছেন।পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের পথ ধরে কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল,রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বৃহৎ প্রকল্পের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি রূপকল্প ‘ভিশন ২০২১’ এর সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচিসহ বাংলাদেশ ব-দ্বীপ মহাপরিকল্পনা(ডেল্টা প্লান ২১০০) গ্রহণ করেছেন।আজকের এ দিনে বাংলাদেশ তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!