সন্দ্বীপ কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষকদের সন্মানী কর্তন করে অপমান সহ বছরে ১৬ লক্ষ টাকার নাস্তার বিলের হরিলুট

সচেতনদের চাকুরীচ্যুত করার পায়তারা চলছে।

0 ৩৮৮,২৪৫

সন্দ্বীপ কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষকদের সন্মানী কর্তন করে অপমান সহ বছরে ১৬ লক্ষ টাকার নাস্তার বিলের হরিলুট এবং সচেতনদের চাকুরীচ্যুত করার পায়তারা চলছে।

সন্দ্বীপে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত ১৬ টি কিশোর কিশোরী ক্লাবের সুপার ভাইজর সবুজ খাঁন ও সন্দ্বীপে প্রকল্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল খালেক এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।১৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা সহ মোট ১৬ টি ক্লাবের ৪ জন জেন্ডার প্রমোটর,১৬ জন সঙ্গীত শিক্ষক ও ১৬ জন আবৃত্তি শিক্ষক সহ মোট ৩৬ জন শিক্ষকের সন্মানী ভাতা বার বার কর্তন করে অনেক কে ৩ ভাগের ২ অংশ এমনকি অনেকের পুরো টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা ভুক্তভোগীরা।

শিক্ষকরা বলেন আমরা ক্লাস করিনি মর্মে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে আমাদের হাজিরা বাতিল করে অনেকের পুরো বেতন ভাতা কর্তন করা হয়েছে।যা সকল শিক্ষদের জন্য লজ্জাস্কর ও অপমানজনক।তাছাড়া সমস্ত ক্লাবের নাস্তার ভাতা সিন্ডিকেট করে পুরোটা উত্তোলন করে নিয়েছেন তারা।অথচ সেই নাম্তার ভাতা শিক্ষার্থীদের পেটে যায়নি।নাস্তার টাকার পরিমান শুনলে বিস্মিত হবে সকলে কারন যে টাকার পরিমান দাঁড়ায় মাসে ১,৩৮,২৪০ টাকা,এক বছরে সর্বমোট ১৬ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮ শত আশি টাকা।কিন্তু  বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সব ক্লাব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকার নাস্তাও ক্লাব গুলোতে সরবরাহ করা হয়না।

অন্যদিকে মহিলা বিষয় অফিসের প্রশিক্ষক ও ক্লাবের দায়িত্বে নিয়োজিত আব্দুল খালেক গত ২/৩ মাস পুর্ব হতে সেই নাস্তা সরবরাহের জন্য কোন স্বীকৃত সার্কুলার বা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে একজন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন যা ওনার নিকট আত্মীয় বা সম্পর্কে সমন্ধি বলে অভিযোগ উঠেছে।এ ঠিকাদার কিভাবে নিয়োগ হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারের মৌখিক আদেশে এটি করেছি।কিন্তু নির্বাহী কর্মকর্তা এ ব্যাপারে কিছুই জানেননা বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।আর মৌখিক আদেশের কোন ভিত্তিও নেই বলে জানান।

বেতন কর্তনের বিষয়ে আব্দুল খালেক বলেন আমি পুরো হাজিরা পাঠিয়েছি সবার কিন্তু সুপার ভাইজর সবুজ খাঁন একবার বলেন হাজিরা কেটে কমিয়ে দিতে  আবার ক্লাবের জেলা কর্মকর্তা ও সেটা কমিয়ে দেন,এভাবে বেতনের বিষয়টা এমন বিব্রতকর অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।এ ব্যাপারে আমার সাথে ওনাদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ হয়েছে।কিন্তু শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মীরা  সুপার ভাইজর সবুজ খাঁন সহ গত হওয়া সুপারভাইজররাও  মুঠোফোনে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বলেন এগুলো কাটার কোন ক্ষমতা আমাদের নেই যা করেছে বা যা হাজিরা পাঠিয়েছে তার পুরো দায়ভার সন্দ্বীপে দায়িত্বে থাকা খালেক সাহেবের।যা বলার ওনাকে বলুন।

অন্যদিকে প্রথম থেকে প্রতিটি ক্লাবে হারমোনিয়াম,তবলা,ফাইল ক্যাবিনেট,হোয়াইট বোর্ড,কেরাম বোড,চেয়ার,টেবিল,দাবা,লুডু খেলার সামগ্রী সহ প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ক্রয় করা হয়েছে  কোন ক্রয় কমিটি ছাড়া।যা বাজার মুল্যের অনেক বেশী বলে জানান প্রতিবাদী শিক্ষক শিক্ষিকারা।এবং তার মধ্যে অনেক গুলো অল্প কয়েবদিনে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

এ বিষয়ে সন্দ্বীপে দায়িত্ব প্রাপ্ত আব্দুল খালেক বলেন এই সমস্ত জিনিস ক্রয়ের জন্য ক্রয় কমিটি করার কোন নির্দেশনা নেই তাই আমরা নিজেই কিনে ভালো মানের জিনিস সরবরাহ করেছি।অন্যদিকে গতকাল প্রতিটি ক্লাবের জন্য মাত্র ৩৫০ টাকা মুল্যের কিছু মনিহারী সামগ্রী প্রদান করা হলেও সকল শিক্ষকের দাবী প্রতিটি ক্লাবের বরাদ্ধ প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা।এই জায়গাতেও ক্রয়ের কোন বিধিমালা মানা হয়নি বা বাজেট সম্পর্কে সবাইকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে।এবং সেগুলো নির্বাহী অফিসারকে দেখানো হয়।এর সাথে গত বছরের মনিহারী সামগ্রীর টাকায় কিছু না দিয়ে সেগুলো বিগত বছর বাজেটের অতিরিক্ত টাকা গেছে মর্মে পুরো টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন তারা।এগুলোর চাহিদা কেউ না দিলেও তিনি শিক্ষকদের চাহিদা মতে কিনেছেন বলে জানান।

অপর দিকে বিগত ৩ বছরে মাত্র একদিন একজন সুপার ভাইজর সন্দ্বীপ পরিদর্শনে এসেছেন।কিন্তু প্রতি সপ্তাহে তিনি সন্দ্বীপে আসার নিয়ম থাকলেও তারা চট্টগ্রামে বসে কিভাবে ভুতুরে রিপোর্ট প্রদান করেন তা সকলের কমন প্রশ্ন। আবার যারা ক্লাস মোটেও করেননা বা ছুটিতে রয়েছেন এমন শিক্ষকের বেতন হলেও একই ক্লাবের সক্রিয় ক্লাস করা শিক্ষকের বেতন না আসায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সকল শিক্ষক বৃন্দ। যা এক ধরনের বিক্ষোভে রুপ নিয়েছে।পরে বিষয়গুলো নিয়ে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসার নিকট গিয়ে সকলে মৌখিক অভিযোগ জানালে তিনি লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে সিদ্ধান্ত দেন। তারা আরো বলেন কয়েকমাস পুর্বে ভুয়া একটি সার্কুলার পড়ে শুনানো হয়,যাতে লেখা ছিলো  ৩০ বছর বয়স উর্ধ সকলে চাকুরি করতে পারবেনা বা তারা স্বেচ্ছায় রিজাইন দিতে হবে।পরে খবর নিয়ে সকল শিক্ষক জানতে পারেন এটি একটি ভুয়া সার্কুলার যা মন্ত্রনালয় বা প্রকল্পের ওয়েবসাইট বা কোন জেলা উপজেলায় প্রচার করা হয়নি।একই সময়ে শিক্ষকতা করতে ইচ্ছুক এমন লোকদের এই প্রকল্প রাজস্ব খাতে চলে যাবে লোভ দেখিয়ে চাকুরীর অফার প্রদান করা হয় লক্ষাধীক টাকার বিনিময়ে।পরে সেটা ধোপে টেকেনি বলে জানান শিক্ষক প্রতিনিধিরা।

এ ব্যাপারে মহিলা বিষয় কর্মকর্তা নাজমুন নাহার মুঠোফোনে বলেন আমি আপনাদের ক্ষোভ,অভিমান ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছি।আমি সদ্য জয়েন করেছি এ প্রকল্পে তাই আমি এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবো তবে অভিযোগ পত্র আমাকে ছাড়া কাউকে না দিলে ভালো হবে।আমি সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেবো তদন্ত সাপেক্ষে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!