জেলা প্রশাসনের অফিস সার্ভেয়ার দুই দিনের রিমান্ডে

ভূমি অধিগ্রহণের ৩ কোটি টাকা আত্মসাত

0 ১০৮,৩৩৪

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণের শত শত ফাইল ও নগদ ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ও কথিত কমিশন নামক ঘুষের কোটি টাকার চেক উত্তোলনের অপচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার সার্ভেয়ার খাজা উদ্দিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।বুধবার(১০ নভেম্বর)দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দীনের আদালত এ আদেশ দেন।এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এসআই) মুমিনুল হাসান ।তিনি বলেন,আজ বুধবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নগরের কোর্ট বিল্ডিং সংলগ্ন হকার মার্কেট থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে,গত সোমবার(৮ নভেম্বর)ক্ষতিপূরণের চেক উত্তোলনের অপচেষ্টায় জড়িত একটি চক্রের ৩ সদস্যকে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।তারা হলেন-উখিয়ার বাসিন্দা জোহুরা, তার বাবা উসমাণ গণি ও বাঁশখালীর এসি ল্যান্ডের চেইনম্যান নেজামুল করিম।এ মামলায় গ্রেফতার জোহুরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলো।

ঘটনার সূত্রপাতঃ

ভূমি অধিকগ্রহণের টাকা আত্মসাতের বিষয় নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।সরকার ভূমি মালিকদের জন্য টাকা বরাদ্দ করে দিলেও অধিগ্রহণের ফাইল ছাড়াতে গিয়ে ঘুষের কবলে পড়তে হয়েছে অনেক ভুক্তভোগীকে।নিরুপায় হয়ে অনেকে তাদের দাবি করা ঘুষ দিয়ে ফাইলও ছাড়িয়েছেন।ঘুষ প্রস্তাবে রাজি না হলে ফাইল ঝুলানোসহ ভূমি মালিকদের সময়ক্ষেপণ করানো হতো।

এমতাবস্থায় একটি রেজিস্টার্ড পাওয়ার অব এটর্নি মূলে এলএ শাখায় হাজির হয়ে গ্রেফতার জোহুরা চেক উত্তোলনের একটি আবেদনে সংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা পাওয়ার দাতাদের পরিচয় ও তার সঙ্গে উক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদকালে তিনি পাওয়ার অব এটর্নি দাতাদের চেনেন না বললে পুরো বিষয়গুলো নজরে আসে জেলা প্রশাসকের।কিন্তু জোহরা বারবার বলে আসছিলো তার স্বামী মূলত তার পক্ষে পাওয়ার অব এটর্নি দলিল সম্পাদন করেন।তার কথায় সন্দেহ হলে জেলা প্রশাসক গোপনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে লোক মারফত উক্ত পাওয়ার দাতাদের সম্পর্কে অনুসন্ধান করার জন্য নির্দেশ দেন।

মাঠে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়ার অব এটর্নি দলিলে বর্ণিত ঠিকানায় আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল নামে দুইজন লোকের দেওয়া তথ্যে উঠে আসে গড়মিলের গল্পকাহিনী।তারা উভয়েই জানান,জোহুরা নামের কাউকে জমির ক্ষতিপূরণ উত্তোলনের জন্য কোনো প্রকার ক্ষমতা অর্পণ করেননি।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়,জোহুরার এলএ শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে উক্ত চেক উত্তোলনের অপচেষ্টার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরে আসলে থানা পুলিশকে অভিযোগ আকারে জানানো হয়।

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্যমতে,২১ নভেম্বর ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণের শত শত ফাইল ও নগদ ৮ লাখ টাকা ও কথিত কমিশন নামক ঘুষের কোটি টাকার চেক দুই কর্মচারি দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক)অভিযানে ধরা পড়ার পর সরকারি এই সংস্থাটির ৪৫ জন সার্ভেয়ারকে একযোগে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।এরমধ্যে ১২ জনই এলএ শাখায় দীর্ঘ দিনধরে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ততা ছিলো।

চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(রাজস্ব)মো. হাবিবুর রহমান ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার(রাজস্ব)খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত’র গত ১৪ নভেম্বর যৌথ স্বাক্ষরে এক অফিস আদেশে তাদের বদলি করেন।তারমধ্যে বেশকিছু সার্ভেয়ারকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা বান্দরবান,রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়েছে।একইভাবে নোয়াখালী হাতিয়া,লক্ষিপুর,টেকনাফ,ফেনী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বদলি হয়েছেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!