“আংকেল আমার বাবা জোর করে বিয়ে দিতে চাইছেন”

0 ৬৮৮,০২৪

চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি মেয়ে আমাকে ফোন করেছে।সে নবম শ্রেণিতে পড়ে।সে বলল,আংকেল আমার বাবা জোর করে বিয়ে দিতে চাইছেন।আমি বিয়ে করতে চাই না।

আমি কার কাছে যাব?আমি বললাম তোমার ডিটেইলস বলো।সে বললো আমি টেলিফোনে বলতে পারবো না,আপনার অফিসে এসে বলবো।এরপর সে এসে দেখা করে অভিযোগ দিয়ে গেল।আমরা যদি বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানাতে পারি তাহলে মেয়েরা অল্প বয়সে বিয়ে করতে রাজি হবে না।

সোমবার(১৭ এপ্রিল)চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ ও বিধিমালা ২০১৮ বিষয়ক ওরিয়েন্টশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এ অভিজ্ঞতার কথা বলেন।স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসা COMBATING EARLY MARRIAGE IN BANGLADESH(CEMB)UNDER CYCDP প্রকল্পের উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা প্রশাসক বলেন, যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলাম (২০১৪-১৭) তখন প্রতি শুক্র ও শনিবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাতাম বাল্যবিবাহ বন্ধে।এখনো আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,সহকারী কমিশনার ভূমি অভিযান চালান।দেখা যায় অভিযান কালে মেয়ের বয়স নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেয় সমাজের লোকজন।তারা বলে বিয়ের বয়স হয়েছে।ভালো খবর হচ্ছে জন্মনিবন্ধন অনলাইন হওয়ায় বয়স বাড়ানোর সুুযোগ কমে গেছে।অভিযানের পর গোপনে অন্য জায়গায় নিয়ে বিয়ে দেয়।১৬-১৮ বছর বয়সে অকালে মা হলে তখন তার পুষ্টির ঘাটতি থাকে।মায়ের পুষ্টির ঘাটতিতে সন্তানের পুষ্টির ঘাটতি হয়।কোনো কারণে মেয়েটি স্বামী পরিত্যাক্তা হলে,স্বামী মারা গেলে সেই মেয়েটির দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জেলা প্রশাসক বলেন,গত মাসে হাটহাজারী উপজেলা সেফ হোম ভিজিট করেছি।সেখানে যারা থাকে তারা কোনো না কোনো ভাবে আইনের সহায়তা পেয়েছে।হয় সে ভিকটিম হয়েছে,নয়তো তাকে রেসকিউ করা হয়েছে।তাদের বয়স আঠারো হয়নি।আমার স্ত্রী সাইকোলজিস্ট।তাকে নিয়ে এসব মেয়েদের অবস্থা দেখতে গিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী কাউন্সিলিং করতে গেছিল।

ঘণ্টাখানেক পর আমার স্ত্রী জানাল,সে খুবই হতাশ।এই মেয়েদের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হলো কবে শ্বশুর বাড়ি যাবে,কবে বিয়ে হবে।তাদের আপন হচ্ছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তাদের মনোজাগতিক বিকাশ,মাইন্ডসেট ডেভেলপ করতে হবে।তাদের শিক্ষিত করতে হবে।সরকারি হটলাইন নম্বরগুলোর সঙ্গে তাদের পরিচিত করতে হবে।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা মহিলা ও শিশু অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মাধবী বড়ুয়া,ইপসার পরিচালক(সামাজিক উন্নয়ন)নাসিম বানু,প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা ইদ্রিস প্রমুখ।

মাধবী বড়ুয়া বলেন,বাংলাদেশ সরকার বাল্যবিবাহ বন্ধে ব্যাপকভাবে কাজ করছে।বিভিন্ন ভাবে প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছে।আইনের সংস্কারসহ যা যা করণীয় সবই করছে।

ওরিয়েন্টেশনের শুরুতে সাংবাদিকদের চারটি ভাগ করে গ্রুপ ওয়ার্ক করানো হয়,সাংবাদিকদের পক্ষে গ্রুপ ভিত্তিক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক হামিদ উল্লাহ,সৈয়দ আবরার,শারমীন রিমা ও ইশতিয়াক শান।ওরিয়েন্টশন পরিচালনা করেন প্রকল্পের জেলা সমন্বয়ক মুহাম্মদ মহিন উদ্দিন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!