কথা ইশারায়,দেখা জানালায়

0 ১৬৮

আব্দুল করিম,চট্টগ্রামঃ করোনা বিশ্বকে সম্মুখীন করেছে অনেক নতুন অভিজ্ঞতার সামনে।ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রনে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখনো।সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে যেমন লকডাউনে ছিলাম আমরা সাধারণরা,ঠিক তেমনি কারাগারে বন্দী মানুষগুলোও।পূর্বে চাইলেই কারাগারে বন্দীদের সাথে আত্মীয়-পরিজনরা দেখা করতে পারলেও এখন করোনার কারণে তা আর হচ্ছেনা।দীর্ঘ কয়েকমাস যাবৎ কারাগারে থাকা বন্দী মানুষটির সাথে মিলছে না সাক্ষাৎ।তাই বলে মনকে সান্তনা দিতে পারছেন না স্বজনরা।বন্দী মানুষটার মুখ দেখতে নিচ্ছে বিকল্প ব্যবস্থা।যদিও সপ্তাহে ৫ মিনিট পরিবারের সাথে মোবাইলে কথা বলতে পারে বন্দীরা।
তবুও দেখার ইচ্ছা কি আর কথায় মেটানো যায়।তাইতো কারাগারের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া জেল রোডটিতে দাঁড়িয়ে বন্দী মানুষটিকে দেখতে জেলের উঁচু উঁচু ভবনগুলোর জানালার পানে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে।

সরেজমিনে দেখা যায়,আমানত শাহ(র.)মাজারের জেল রোডটির পাশে দাঁড়িয়ে আছে বহু মানুষ।আকাশ পানে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা এসব মানুষগুলোর নজর ছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদের জানালায়।কেউ কেউ প্রিয় মানুষটির খোঁজ পেলেও অনেকেই তাকাচ্ছেন এদিক ওদিক।খোঁজ করছেন কোন জানালায় আছে তার স্বজন।খোঁজ মিললেই ইশারা দিচ্ছেন।চিৎকার করে জানতে চাইছেন তার অবস্থা।জানান দিচ্ছে তারা কেমন আছেন সেটাও।ইশারায় জানতে চাইছেন প্রয়োজন সম্পর্কে।ভেতরে থাকা মুখগুলোও বুঝার চেষ্টা করছেন প্রিয় মানুষগুলোর কথা।বুঝতে না পারলেও বার বার বুঝাচ্ছেন,ভেতরে ভালো থাকার কথা।বলছেন চিন্তা না করতে।অনেকেই জানালার সামনে ভিড় ঠেলে আসতে না পারলেও স্বজনদের দেখে ইশারা দিচ্ছেন দুই আঙুল তুলে।জানান দিচ্ছেন,জামিনের বিষয়ে।আর এসব সাংকেতিক ইশারার অর্থ জানা যায় জেল রোডে বন্দীদের দেখতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর সাথে কথা বলে। সরওয়ার নামে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি বলেন,‘করোনার কারণে ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যেতে পারছি না।তবে জেল গেটে গিয়ে তার জন্য কাপড় ও কিছু টাকা জমা দিয়ে এসেছি।আর আজ আসবো বলে জানিয়েছিলাম ভাইয়াকে। কারণ,করোনার কারণে সাক্ষাৎ বন্ধ করা হলেও মোবাইলে প্রতি সপ্তাহে একবার পরিবারের মানুষের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন কারা-কর্তৃপক্ষ।তখনই আজ আসার বিষয়টি জানিয়েছিলাম।একটু দূর থেকে হলেও প্রিয়জনের মুখ দেখে অনেকটাই প্রশান্তি লাগছে।ইশারায় তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চাইলাম।তিনিও ইশারায় জানান দিলেন,কেমন আছেন সে সম্পর্কে।কথা বোঝা না গেলেও দূর থেকে ভাইকে দেখতে পেরেই ভালো লাগছে।’চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্বরত সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন বলেন,‘সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই কারাগারে বন্ধ রাখা হয়েছে বন্দীদের সাথে সাক্ষাৎ।তবে বন্দীদের সাথে সপ্তাহে ৫ মিনিট কথা বলতে পারেন তার পরিবারের সদস্য কিংবা স্বজনরা।তবুও সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় অনেকেই কারাগারের পাশের রোডটিতে গিয়ে ইশারায় স্বজনদের মুখ দেখার চেষ্টা করছেন দূর থেকে।এ বিষয়ে আমাদের কারা-কর্তৃপক্ষ থেকে কোন বাঁধাও প্রদান করা হয়নি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!