কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে সংস্কারকাজে কচ্ছপগতি হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে

0 ১৯৫

সাখাওয়াত হোসেন তুহিন: ৭৩ বছর ধরেই চলছে খোড়াখুড়ি-সংস্কারের কাজ।কচ্ছপগতিতে বছরের পর বছর এ সড়কটির পরিচালনায় রয়েছেন সওজ’র পালাক্রমে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী,কিন্তু এক দিনের জন্যও নিরাপদে-স্বস্তিতে গন্ত্যব্যে পৌঁছতে পারেনি যাত্রী ও মালামাল পরিবহনগুলো।গত অর্থবছরে ২৩কোটি টাকা প্রাক্কলিতব্যয়ে সড়ক সংস্কার চলতি বছরের ৯সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলেও,এখনো চলছে সংস্কার কাজ।তবে সওজ’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,পুরাতন সড়কের জন্য আর কোন বরাদ্ধ থাকছেনা। আগামী একনেকের বৈঠকে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ফোর-লেইনে সড়কটি উন্নীতকরণে ৬মাসের মধ্যে কার্যাদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়,গতবছরের জুন মাসে ২০১৯-২০২০ইং অর্থবছরে ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক’র কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্ট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র সরাইল উপজেলার কালামুড়া ব্রীজ পর্যন্ত ৪০কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। উক্ত দরপত্রে ‘হাসান টেকনো বিল্ডার্স’ ও ‘মেসার্স সোহাগ এন্টার প্রাইজ’ ২৩কোটি টাকার প্রাক্কলিতব্যায় হিসেবে কাজটি পান। দরপত্রে কাজটি সম্পন্ন করায় ২০১৯সালের ৯ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৮সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯মাস সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।গত মাসের ৮সেপ্টেম্বর কার্যাদেশের সময়সীমা শেষ হলেও এখনো সড়কের বুড়িচং উপজেলার কংশনগর বাজার ও দেবীদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজার এলাকায় ঢালাইকৃত অংশের একপাশ চালু হয়নি।

দেবিদ্বার থানাগেইট থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত ঢালাই করা অংশের ৬টি প্যানাল ভেঙ্গে ইট,পাথর সূরকী,সিমেন্ট বালুতে পরিনত ও ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে রডগুলো ভেসে ইঠেছে।চলমান ভারী যানবাহন যাতায়াতকালে গর্তে পড়ার ঝাঁকুনিতে পাশ্ববর্তী বহুতল ভবনগুলোও কেঁপে উঠছে।প্রায়ই রাতের অন্ধকারে রডের গুতোয় ভারী যানবাহনের টায়ার ফুটা এবং এক্সেল ভাঙ্গার শব্দে ঘুমন্ত মানুষ জেগে উঠছেন।কিছু কিছু যানবাহন ওই অংশ ভাঙ্গা সড়কের গর্তের মুখমুখী এসে থমকে যাচ্ছে।এতে যানজটও চরম আকার ধারন করছে।

এবিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ কুমিল্লা’র নির্বাহী প্রকৌশলী ড.মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ বলেন,অনেক আগেই সড়ক সংস্কার কাজ শেষ হয়ে গেছে।এখনো জাফরগঞ্জ বাজার এলাকার ঢালাইকরা অংশের একাংশ চালু না হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।এখন যে কাজ করা হচ্ছে তা ডিপার্টম্যান্টাল মেইন্টেনেন্টস করা হচ্ছে।দেবীদ্বার থানা গেইট এলাকায় সদ্য নির্মীত ঢালাই ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি প্রথমে অজানা থাকলেও পরবর্তীতে জানারপর ওই অংশের ৬টি প্যানাল পুনরায় সংস্কারের আশ্বাসও দেন তিনি। স্থানীয়রা জানান,১৯৪৭ সালে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক সড়কটি চালু হয়েছে।দেশ স্বাধীনের পর সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়ক নামে পরিচিতি পায়।

সড়কটি চালু হওয়ার পর বিগত ৭৩বছর ধরে সড়কের খানা খন্দে,দেবে যাওয়া অংশ,ভেঙ্গে যাওয়া ব্রীজ,কালভার্ট সংস্কার কাজ চলে আসছে।কখনো ৪কোটি,কখনো ১০কোটি,আবার কখনো ২৩কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার ও মেরামতের কাজ চললেও একদিনের জন্যও যাত্রী ও মালামাল বহনের পরিবহগুলো স্বস্তিতে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি।বছরের অধিকাংশ সময়ই সড়ক ও জনপদ বিভাগ’র কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারগন সড়ক সংস্কারে ব্যস্ততম সময় কাটিয়ে আসছেন।এখনো তা অব্যাহত আছে।কবে তা থেকে নিস্ক্রীতি পাবে তা কেউ জানেন না।

স্থানীয়রা যানজট ও দূর্ঘটনা এড়াতে এবং সড়কটি দ্রত ফোর-লেইনে উন্নীতকরণে,সড়কের দু’পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি,অবৈধ স্থাপনা,দৈনিক বাজার,সিএনজি ও অটো রিকসা ষ্ট্যান্ড উচ্ছেদ,সড়কের দু’পাশের জমি অধিগ্রহন,পয়নিষ্কাশনে সড়কের পাশে আরসিসি ড্রেন নির্মান ও ড্রেনের উপর দিয়ে ফুটপাত তৈরী,গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে ফুট ওভার ব্রীজ নির্মানেরও দাবী জানান।তবে বিগত দুই যুগ ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও একনেক সভায় উক্ত সড়কটি টু-লেইন, ফোর-লেইন,সিক্স-লেইনে উন্নীত করার আশ্বাস দিলেও এরই মধ্যে কয়েকটি সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরও তা বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখেনি।গত কয়েক বছরে একাধিক সার্ভেয়ার টিম,এলও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি সড়ক ও জনপদ বিভাগ জরিপ,লেভেলিং মেসিন,দূরবিন দিয়ে সার্ভে করা,জমি অধিগ্রহণের সাইড নির্ধারন ও পরিকল্পনা,মাপঝোপ সম্পন্ন করতে দেখা গেলেও সবই এখন ফাইলবন্দী।বর্তমানে আপদকালিন সময়ে কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার কালামুড়া ব্রীজ পর্যন্ত ৪০কিলোমিটার এলাকায় ২৪ফুট প্রসস্থে সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!