মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন,লড়াই আমার সঙ্গে করুন।

0 ৩৮৭,৬৬২

লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়ে সংসদ সদস্য(নড়াইল-২)ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে এমন অভিযোগ তিনি নিজেই করেছেন। মাশরাফি বলছেন,সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণ করে তাকেও বিপদে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

এজন্য রোববার(১৭ জুলাই)দুপুরে মাশরাফি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ‘অদৃশ্য শত্রুদের’ তার সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি বলেন,পেছন থেকে আঘাত না করে সামনে থেকে করুন।আমার সঙ্গে সরাসরি লড়াই করুন।

‘একটু বোঝার চেষ্টা করছি,আর কত দিক থেকে আক্রমণ হতে পারে’শুরুতে এমনটা জানিয়ে ফ্ল্যাশব্যাকের তথ্য টানেন মাশরাফি।বলেন,প্রথম আক্রমণের কথা হয়তো সবাই ভুলে গেছেন,তাই মনে করিয়ে দিচ্ছি।প্রথম ঝামেলা করল তারা মাওলানা মামুনুলকে নিয়ে।তাকে যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা দিল,তখন ওয়াজ করার জন্য নড়াইলে আনা হলো।

‘কথা হলো,যখন ওয়াজ মাহফিল হয়,সেটার পারমিশন দিয়ে থাকেন ডিসি।নিরাপত্তার ব্যাপার দেখেন এসপি।এখানে এমপিদের কোনও কাজ-ই নেই।কিন্তু ডিসি বা এসপি থেকে আমাকে বিন্দুমাত্র না জানিয়ে ওয়াজ মাহফিল দেওয়া হলো নোয়াগ্রামে।যেখানে আমার শ্বশুর বাড়ি।’

‘মাওলানা মামুনুলকে আগেই বলা ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি নেওয়া আছে আপনি চলে আসেন।অথচ কালনা ঘাট পর্যন্ত আনার পর তবেই কেবল ডিসি,এসপিকে জানাল।ঘাট থেকে যখন তাকে বলা হলো যে,আপনার চিঠি কোথায়?সে দিতে পারল না।মাহফিল কর্তৃপক্ষ তখন আমাকে ফোন করে বলল, আপনি সমস্যা ঠিক করেন। কথা হলো,তখন এই সমস্যার সমাধান করা কীভাবে সম্ভব? এটা তো পুরোটাই একটা প্রক্রিয়া।যা আরও সাত দিন আগে থেকে করতে হয়!’

মাশরাফি বলেন,তখন ওই লোকগুলো বলা শুরু করে দিল,আমি নাকি ওয়াজ মাহফিল হতে দিচ্ছি না।পুরো খেলাটা খেলেছে এমনভাবে।তাকে আমার শ্বশুর বাড়ি এলাকায় এনে সরকারের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছে,আমি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মানছি না।আর যদি না আসতে পারে তাহলে প্রচার করা হবে যে,মাশরাফি ওয়াজ করতে দেয় না।দুই দিক থেকেই তাদের জয়।আর দুই পক্ষের কাছেই আমাকে খারাপ বানাবে।তবে যাইহোক,আল্লাহ মালিক।সত্য আর চাপা থাকেনি।সবাই কমবেশি জেনেছে সত্যিটা।আর যারা জানে না,তারা ভুল বুঝেই আছে।জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক আরও বলেন,এবার উল্টো খেলা খেলল তারা।সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের ওপর আক্রমণ করে তাদের বিপদে ফেলা।পাশাপাশি আমাকেও বিপদে ঠেলে দেওয়া।এমনকি,কিছুদিন আগে কালিয়ার মির্জাপুরে সম্মানিত একজন শিক্ষককে অপমানের ঘটনায়ও আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।অথচ ওটা আমার আসনের ভেতর নয়।

অদৃশ্য শত্রুদের লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে মাশরাফি বলেন,যাক,আপনারা সব তো করলেন। এবার আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ,পেছন থেকে আঘাত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তো আসুন,সামনে থেকে আঘাত করুন।আমার সঙ্গে সরাসরি লড়াই করুন।আমি সাধুবাদ জানাব।কিন্তু আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ-অসহায় মানুষের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন,লড়াই আমার সঙ্গে করুন। আমি জানি,নড়াইলে রাজনীতি যাদের কাছে পেশা, তাদের কাছে আমি এখন নেশা…

উল্লেখ্য,এক কলেজ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার(১৫ জুলাই)নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি,দোকান ও মন্দিরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।শনিবার এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের ফাঁদে পড়ে নড়াইলের হাজার বছরের ঐতিহ্য-সম্প্রীতির বন্ধনকে ম্লান না করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন মাশরাফি।শনিবার(১৬ জুলাই)মধ্যরাতে সেই কলেজছাত্র আকাশ সাহাকে (২০)খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।এমনকি ধর্ম অবমাননার বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!