রমজানের আগেই বাজারে আগুন

0 ৫০৬,৬৫১

রমজান শুরু হওয়ার আগেই আরেক দফা বেড়েছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। ইফতারিতে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বেড়েছে বেশি।কয়েকটির দাম এতটাই বেড়েছে, যা অনেকের নাগালের বাইরে চলে গেছে।রমজানে ইফতারি তৈরিতে সাধারণত ছোলা,অ্যাঙ্কর ডাল ও বেসন বেশি ব্যবহার হয়।রোজার দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও এরই মধ্যে বেড়ে গেছে এসব পণ্যের দাম।গত এক মাসে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা।সপ্তাহখানেক আগে ছোলার কেজি ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।মানভেদে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা।ছোলার সঙ্গে ছোলাবুটের দরও বেড়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ মানের বুট কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।প্রতি কেজি ছোলাবুট বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে।পিছিয়ে নেই অ্যাঙ্কর ডাল।একই সময়ে এ ডাল কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।এ ছাড়া বেসনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা।

রমজানে প্রচলিত এসব ডালের পাশাপাশি পাকিস্তানি কাবলি বুট বিক্রি হয় বাজারে।গত বছর এ ধরনের ডাল বিক্রি হয়েছিল ১৪০ থেকে ১৬০ কেজি দরে।এবার বিক্রেতারা এ মানের কাবলি বুটের কেজি হাঁকছেন ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা।সে হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি কেজি কাবলি বুট কিনতে ক্রেতাকে অতিরিক্ত খরচ করতে হবে ৯০ থেকে ১০০ টাকা।সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)তথ্য বলছে,গত এক মাসে ছোলার দাম প্রায় ৬ এবং এক বছরে ২৩ শতাংশ বেড়েছে।এ ছাড়া অ্যাঙ্কর ডাল এক বছরে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ।

এবার রমজানে খেজুরের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।এর পর থেকেই পাইকারি বাজারে খেজুরের দাম চড়তে থাকে।খুচরা বাজারেও সেই প্রভাব পড়ে।কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে সপ্তাহ দুয়েক ধরে সাধারণ মানের জাহেদি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে।ভালো খেজুরের দাম বেড়েছে আরও বেশি।১৫ থেকে ২০ দিনের ব্যবধানে আজোয়া ও মরিয়ম জাতীয় খেজুরের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।বাজারে প্রতি কেজি মরিয়ম খেজুর ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা এবং আজোয়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।এ ছাড়া খুরমা ও দাবাস খেজুরের কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।টিসিবির বাজারদর বলছে,খেজুরের দাম এক বছরে বেড়েছে ২০ শতাংশ।বাজারে বাড়ার কারণে টিসিবির সাশ্রয়ী খেজুরের দামও কেজিতে ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে পাইকারি বাজারে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দর দুই-এক টাকা করে বাড়ছে।খুচরা বাজারেও এর প্রভাব দেখা গেছে।সরকার প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করলেও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।একইভাবে সরকার নির্ধারিত ১৬৭ টাকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়।তবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার নির্ধারিত ১৮৭ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে আমদানিকারকদের দাবির মুখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর)চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়েছে।একই সঙ্গে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে তিন হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনিতে ছয় হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে।আমদানিকারক ও বাজারজাতকারীদের তথ্যমতে, শুল্ক ছাড়ের এই সুবিধার আওতায় চিনি আমদানি হলে কেজিতে ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা পর্যন্ত দাম কমতে পারে।তবে বাজারে দাম কমেনি।এখনও খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১১২ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এ ছাড়া লাল চিনি (দেশি) বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দামে।সরকারি হিসাবে গত এক বছরে চিনির দাম প্রায় ৪৯ শতাংশ বেড়েছে।

এচাড়া মুরগির বাজার দেড় মাস ধরেই অস্থির।দফায় দফায় বেড়ে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।ডিমের বাজারও কিছুটা বেশি।প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা।শবেবরাতের আগে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হলেও শবেবরাতের দিন দাম বেড়ে যায়।ওই দিন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে গরুর মাংস।হাত দেওয়া যাচ্ছে না মাছে। তেলাপিয়া,পাঙাশ ও চাষের কই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।মানভেদে রুই-কাতলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।চিংড়ি আর ইলিশ কেনা এখন বিলাসিতা।আকারভেদে চিংড়ি ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং ইলিশ ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।টিসিবির তথ্য বলছে,এক বছরে ব্রয়লারের দাম ৮৫,গরুর মাংস,ডিম ১৬ এবং রুই মাছের দাম প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।

রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের বাজার টালমাটাল না হয়, সে জন্য গত ১২ ফেব্রুয়ারি এফবিসিসিআই নিত্যপণ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল।এর পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একই উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ভোক্তা অধিদপ্তর।দুটি সভায় ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন,পর্যাপ্ত পণ্য মজুত আছে।রমজানে দাম বাড়বে না।তবে তাঁদের সেই প্রতিশ্রুতি দেখা যাচ্ছে না বাজারে।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বারবার সভা করে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেননি ব্যবসায়ীরা।অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী বাজারে তদারকি চলছে।এটি আরও জোরদার হবে।ব্রয়লারের বাজারে তদারকি জোরদার করা হয়েছে।তবে ভোক্তা অধিদপ্তর ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর রয়েছে।তাদের কোনো উদ্যোগ বা তদারকি নেই।ফলে ভোক্তা অধিদপ্তরের একার পক্ষে সব পণ্যের বাজারে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাজারের এ ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতি কোনো সংস্থা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে মনে করেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন,আমদানি করা জিনিসগুলোর দামই বেশি বেড়েছে।বাড়ার পেছনে যুক্তিও আছে।৮৫ টাকার ডলারের দাম বেড়ে হয়েছে ১১২ টাকা।এই দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানি করতে হয়েছে।অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে ডলারের দাম।ডলারের দাম বাড়ার কারণে তাদের শুল্কও বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।সে হিসাবে পণ্যের দামও ৩০ শতাংশ বাড়ার কথা।এ ছাড়া এর সঙ্গে পরিবহন,শ্রমিকের মজুরি ও উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!