সন্দ্বীপে ১২ বছর ধরে ডাঙ্গায় পড়ে থাকা কোটি টাকার ওয়াটার এ্যাম্বুলেন্স জলে নামেনি একদিনও।

সতীনের দৃষ্টিতে দেখে ঘাট কর্তৃপক্ষ

0 ২০০,২৪৫

সাগর বেষ্টিত সন্দ্বীপ বাংলাদেশের একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ হলেও এটিকে বর্তমানে একটি উন্নয়নশীল উপজেলা বা উন্নত উপজেলা হিসেবে ধরা হচ্ছে কিন্তু সুচনা লগ্ন থেকে সন্দ্বীপের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা বিদ্যমান বা এ খাতে উল্লেখযোগ্য কোন পরির্তন হয়নি। দুই তিনটি সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও নেই কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি, অন্যদিকে রয়েছে লােক বলের সংকট।এক্সরে, ইসিজি,ইটিটি,আলট্রাসনোগ্রাফি, এন্ডোসকপি ইত্যাদি যন্ত্র না থাকা বা থাকলেও তা অকেজো হয়ে পড়ে থাকার কারনে স্বাস্থ্য সন্দ্বীপের স্বাস্থ্য সেবায় মানুষের কোন আস্থা নেই। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য সন্দ্বীপ বাসী চট্টগ্রামের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু দ্বীপটি বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চট্টগ্রামে রুগী পরিবহনে নৌ-পথ ছাড়া কোন মাধ্যম নেই। অপরদিকে উত্তাল সাগরের কারনে কোন নৌ-যানও নিরাপদ নয়। আবার রাত্রি বেলা নৌ-যাতায়াত ও বন্ধ থাকে। তাই মুমুর্ষ,প্রসুতি,গর্ভবতী,এক্সিডেন্টের রোগীদের দ্রুত চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পুর্বে অনেকে মৃত্যবরন করে।অন্যদিকে সন্দ্বীপে কোন মেটারনিটি বা মাতৃসদন হসপিটাল না থাকায় বিগত দিনে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার সময় পথের পাশে,স্টীমারে এবং স্পীর্ডেবোট বা লালবোটেও নারীদের সন্তান প্রসবের অনেক নজির আছে, অনেকে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুবরন করেছেন পথে।

 

এ সমস্ত কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ২০০৮ সালে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি সি-এম্বুলেন্স প্রদান করে জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য। কিন্তু তা একদিনও চলেনি বলে জনগনের অভিযোগ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলুল করিম বলেন সি -এম্বূলেন্স প্রদান করা হলেও তা চালানোর জন্য কোন ফুয়েল কস্ট ও চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি তাই সেটি সচল করা যায়নি। এবং সেটিকে ভালো রাখতে হলে ২ বার জোয়ারের আগে ও পরে মোট চারবার নদীতে উঠা নামে করাতে হতো নয়তো সেটা পলি জমে নষ্ট হয়ে যেতো তাই বার বার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় সেটিকে ২০ শয্যা হসপিটালের পাশে এনে রেখে দিয়েছি।

 

আমাদের এ প্রতিবেদক সেখানে গিয়ে দেখেন সেটি অযত্ন অবহেলায় এখন ভগ্নাবশেষে বা এসক্রাফে পরিনত হয়েছে।তার চারদিকে লতা গুল্মের উপস্থিতি সেটাকে একেবারে কাফনের কাপড়ের মতো ঢেকে দিয়েছে।

 

অপরদিকে ২০১৫ সালে ৬৫ লক্ষ টাকার আরেকটি ওয়াটার এম্ব্যুলেন্স প্রদান করা হয় উপজেলা প্রশানের মাধ্যমে। একটি এম্বুলেন্স যে কারনে সচল রাখা যায়নি সে কারন দেখিয়ে দ্বিতীয়টা গ্রহন থেকে কেন বিরত থাকা হয়নি সে প্রশ্নে ডাঃ ফজলুল করিম বলেন দুটো দুই মন্ত্রনালয় থেকে দেওয়া হয়েছে একটি স্বাস্থ্য অন্যটি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।

 

সেটিও সচল না রাখার বিষয়ে বরাবরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তৈল ও চালকের অজুহাত দিলেও এবার তাদের রুপান্তরিত বক্তব্যে বলেন আসলে এগুলো সন্দ্বীপ চ্যানেল বা উত্তাল সাগরে চলাচল উপযোগী নয়। এগুলো মুলত হাওর এলাকার জন্য তৈরি করা হয়েছিলো কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারনে এগুলো সন্দ্বীপ পাঠানো হয়েছে তাই এগুলো কোন কালে সচল করা যাবেনা।এটা অনেকটা মরা ছেলের মতোই। তা নিয়ে কেঁদে কেটে কোন লাভ নেই।কিন্তু জনগন বলছেন শীতকালেতো নদী পথ হাওরের চেয়ে ঠান্ডা থাকে তখনতো চলতে পারে। সে-সময়তো চলাচলে বিঘ্ন ঘটার কোন কারন নেই। মুলত ঘাট কর্তৃপক্ষ এটিকে সতীনের দৃষ্টিতে দেখেন এবং তাদের দ্বারা কর্তৃপক্ষ প্রভাবিত হয়।

 

অপর দিকে এলাকার জনগন বলছেন এগুলো যদি ব্যবহার উপযোগী না হয় তবে প্রশাসনের লোকজন সেটি দিয়ে কিভাবে মাঝে মাঝে চট্টগ্রামে যাতায়াত করে?

সেটার সত্যতা জানতে চাইলে ডাঃ ফজলুল করিম বলেন একবার সিভিল সার্জন মহোদয় এসেছিলেন কিন্তু অন্য কেউ সেটা দিয়ে যাতায়াত করে কিনা আমার জানা নেই।

এ থেকে প্রতীয়মান হয় এটা সন্দ্বীপ চ্যানেলে চলতে পারে বলে মন্তব্য করেন কলেজ ছাত্র মোঃ আবরার হোসেন।

 

অপর দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন এটি সচল থাকুক সেটা ঘাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ চায়না তারা এটিকে সতীনের মতো মনে করে। কারন এটি সচল থাকলে এই এ্যাম্বুলেন্সে স্ট্রেচার ও অক্সিজেন ব্যবস্থা থাকায় স্পীর্ডবোট মালিকদের স্বার্থ বিঘ্নিত হবে তাদের ভাড়া কমে যাবে বলে তারা অনৈতিক ভাবে এটিকে নিস্ক্রিয় রাখার ব্যবস্থা করেছেন।ইচ্ছে করলে এটি সক্রিয় করা যায়।

 

অপরদিকে এ বর্ষায় রোগী পরিবহন করতে কাঁদা মাটি ও কেওড়া কাঠের সাঁকো পেরিয়ে রোগী বোটে তোলাকে অনেকে পুলশি রাতের সাঁকো পেরুনোর সাথে তুলনা করছেন।

 

আবার সন্দ্বীপে একটি বেসরকারী হসপিটালে সিজার অপারেশনের ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিটি রুগী বাড়ি ফেরার পুর্বে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা গচ্ছা দিচ্ছে।তাই নিশ্চিত দ্বিতীয় সিজার অপারেশনে একই পরিমান টাকা খরচ করতে পারবেননা বলে দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দান থেকে বিরত থেকে একটি সন্তানেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে অনেক মাকে । আর যে সমস্ত সচ্চল পরিবার রয়েছে তারা ডেলিভারী রোগীকে ১/২ মাস পুর্বে চট্টগ্রামে আত্মীয়ের বাসা বা হোটেলে রেখে ডেলিভারি করান বলে জানান স্কুল শিক্ষক মোদাচ্ছের আহাম্মদ।

 

এখন উন্নয়নের রুপকার সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতার কাছে নব নির্মিত মুস্তাফিজুর রহমান জেটি উদ্বোধনের সাথে সাথে ওয়াটার এম্বু্লেন্স চালু করে মৃত্যু হার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানাচ্ছেন সন্দ্বীপের চার লক্ষ জনগন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!