সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন ও সন্দ্বীপ এডুকেশন সোসাইটি চট্টগ্রাম এর উদ্যেগে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।

0 ১০৮,৪৫৮

সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম যাতায়াতের সকল ঘাটে একক ইজারা প্রথা বাতিল করে ঘাট উম্মুক্তকরণ,নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতকরণ ও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণের দাবিতে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন ও সন্দ্বীপ এডুকেশন সোসাইটি চট্টগ্রাম এর দাবি গুলো হলো মধ্যে রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত খাস কালেকশনের নামে একক মনোপলি অবৈধ ইজারা প্রথা বাতিল করে দেশের অন্যান্য নৌ রুটের মতো ঘাট উম্মুক্ত করতে হবে।

সন্দ্বীপের মানুষের যাতায়াতের সকল ঘাটের অবকাঠামো উন্নয়ন করে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে ঘাট পরিচালনা করতে হবে।

বাংলাদেশের অন্যান্য নৌ রুটের মতো সন্দ্বীপের মানুষের যাতায়াতের সকল ঘাটে স্পীড বোট ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৮-১০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং যাত্রী প্রতি ২০ কেজি পর্যন্ত মালামাল বিনা মাশুলে পরিবহনের সুযোগ থাকতে হবে।

সার্ভিস বোট ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৫- ৬ টাকা নির্ধারন করতে হবে।

ট্রলারে মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে এবং দেশের অন্যান্য নৌ রুটের মতো সরকার নির্ধারিত হারে আদায়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘাটের উম্মুক্ত স্থানে ভাড়ার সাইনবোর্ড টাঙাতে হবে।

ঘাটে যাত্রী পারাপারের জন্য বৈধ আধুনিক মানসম্মত ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে চলাচল উপযোগী যান চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।

ঘাটে সাধারণ যাত্রীদের টিকেট প্রাপ্তিতে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে না রেখে টিকেট প্রাপ্তি সহজ করতে হবে।

ঘাটে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বারা সাধারন যাত্রীদের দুর্ব্যবহার ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে।যে কোন হয়রানি প্রতিকারে ঘাট পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের ফোন নম্বর দিতে হবে এবং তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট সহ সকল ঘাট পরিচালনা তদারকির জন্য এবং যে কোন দুর্ঘটনায় দ্রত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ক্ষতিপুরন আদায়ের জন্য জেলা প্রশাসক,উপজেলা প্রশাসন,বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতিনিধি, বিআইডব্লিউটিসি’র প্রতিনিধি,নৌবাহিনীর প্রতিনিধি, কোষ্ট গার্ড প্রতিনিধি,নৌ পুলিশের প্রতিনিধি,জেলা পরিষদের প্রতিনিধি,মিডিয়া প্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে।

স্মারক লিপিতে উপরের দাবী সমুহ বাস্তবায়নের জন্য সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন ও সন্দ্বীপ এডুকেশন সোসাইটি চট্টগ্রাম এর উদ্যোগে আজ ১৩ই ফেব্রুয়ারী বেলা ১২ টায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

এই বিষয়ে সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন ও সন্দ্বীপ এডুকেশন সোসাইটি চট্টগ্রাম এর পক্ষ থেকে রাজিবুল আহসান সুমন নিজের ফেইসবুক বার্তায় বলেন,বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ।সন্দ্বীপ থেকে বের হওয়ার মূলপথ নদীপথ।অনেক বছর আগে আমাদের পুর্ব পুরুষরা নিরাপদ নৌ যাতায়াতের জন্য আন্দোলন করে সদরঘাট-সন্দ্বীপ ও কুমিরা-মাইটভাঙ্গা-গুপ্তছড়া নৌ রুটে বিআইডব্লিউটিসি’র জাহাজ আদায় করেছে।অনেক বছর ধরে এই দুটি নৌরুট “বিআইডব্লিউটি” এর মালিকানায় থাকা অবস্থায় বিআইডব্লিউটিসি’র জাহাজ চলাচল করেছে।তখন কুমিরা-গুপ্তছড়া-মাইটভাঙ্গা নৌরুটে জেলা পরিষদ কোন যাত্রী পারাপার করতো না।জেলা পরিষদ শুধু বিভিন্ন খালে নোঙর করা নৌযান থেকে গুদি ভাড়া নেওয়ার জন্য বাৎসরিক ইজারাদার নিয়োগ করতো।

২০০১ সালের পরে কোন এক কারনে মাইটভাংগা ঘাট এবং ২০১১/২০১২ সালের চর জাগার কারনে সদরঘাট-হরিশপুর ঘাট বন্ধ করে “বিআইডব্লিউটিসি” শুধু কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটে জাহাজ চলাচল সীমাবদ্ধ রাখে।তখনও জেলা পরিষদ এই ঘাটের মালিকানা দাবি করেনি।তখন জেলা পরিষদ থেকে রাজা কাশেম মাল পরিবহন করার নামে গুদি ঘাট ইজারা নিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু করে।আস্তে আস্তে বিআইডব্লিউটিসি অকার্যকর হয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে।

২০১২-১৩ সালে জেলা পরিষদের ইজারাদার রাজা কাশেমের স্বেচ্ছাচারিতা,অনিয়ম ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হলে এবং বিআইডব্লিউটিসি আধুনিক জাহাজ চালুর দাবি জোড়ালো হলে জেলা পরিষদ সন্দ্বীপের মানুষের দাবির প্রতি নমনীয় হয়ে ইজারাদার পরিবর্তন করে এবং পর্যায়ক্রমে স্পীড বোটের ভাড়া কমানোর আশ্বাস প্রদান করে।এই সময় বিআইডব্লিউটিসি ও জেলা পরিষদের বিরোধ চরমে উঠে।এর প্রেক্ষিতে ২০ মার্চ ২০১৪ তারিখে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহাজান খান,সন্দ্বীপের এমপি ও সীতাকুণ্ডের এমপি’র উপস্থিতিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি’র বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সারোয়ার জাহান ও সচিব রবীন্দ্রশ্রী রড়ুয়া উপস্থিতিতে বিআইডব্লিউটিএ’র মালিকানাধীন কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট বাবদ বাৎসরিক ৪০লক্ষ টাকা প্রদান সহ চারটি শর্তে চটগ্রাম জেলা পরিষদকে চালানোর দায়িত্ব প্রদান করা হয়।সেই মোতাবেক জেলা পরিষদ বিআইডব্লিউটিএ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে খাস কালেকশনের মাধ্যমে ইজারাদার নিয়োগ করে ঘাট পরিচালনা করে আসছে।

যাত্রী পারাপারে সরকারি কোন নিয়মনীতি না মেনে, বাংলাদেশের অন্যান্য নৌ রুটের সাথে ভাড়ার সামঞ্জস্য রেখে যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ না করে জেলা পরিষদ ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে ঘাট ইজারা নিয়ে আবার খাঁস কালেকশনের মাধ্যমে সন্দ্বীপের মানুষের কাছ থেকে ৯৩০০০×৩৬৫= ৩,৩৯,৪৫,০০০/- টাকা আদায় করছে।অন্য দিকে ইজারাদার জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে বছরে আরো কমপক্ষে ১০গুন টাকা আদায় করছে।

এই ভাবে জেলা পরিষদ কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটে যাত্রী ও মালামাল বহন করলেও নৌ পথে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে বা নদীতে লঞ্চ, ট্রলার, লালবোট বা স্পীড বোট ডুবে কোন যাত্রীর মৃত্যু হলে জেলা পরিষদ এর দায় নেয় না।জেলা পরিষদ ঘাট চালানোর দায়িত্বে থাকাবস্থায় লাল বোটে ১৮ জন যাত্রী মারা গেলে জেলা পরিষদ কোন দায় নেয় নি এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারকে কোন ক্ষতিপুরন দেয় নি।এমনকি হাইকোর্ট মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপুরনের টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও জেলা পরিষদ তাতে আপিল করে ঠেকিয়ে রেখেছে।

এই দিকে ৩ মার্চ ২০২০ সালে সরকারী এক সিন্ধান্ত মোতাবেক রাসমনি ঘাট-মিরসরাই কে নদী বন্দর ঘোষনা করে বিআইডব্লিউটিএ কে এর সংরক্ষক ও নিয়ন্ত্রক হিসাবে দায়িত্ব অর্পন করলে বিআইডব্লিউটিএ জেলা পরিষদের সাথে ২০২০ সালের পর থেকে আর কোন চুক্তি নবায়ন করেনি।বিআইডব্লিউটিএ’র মালিকানায় বিআইডব্লিউটিসি কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটে ইজারাদার নিয়োগ করে এবং এমবি আইভী রহমান নামের জাহাজ চালানো শুরু করে।এই জাহাজ চলাচলও বেশির ভাগ বন্ধ থাকে বিভিন্ন অজুহাতে।

এইভাবে সন্দ্বীপের মানুষের যাতায়াতের এই প্রধান নৌ রুটটি একটি জগাখিচুরি,নৈরাজ্যকর ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।একদিকে দেশের যে কোন ঘাটের তুলনায় সীমাহীন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে জেলা পরিষদ সন্দ্বীপের মানুষের প্রতি চরম অবিচার করছে।অন্যদিকে দুর্ঘটনায় কোন দায়িত্ব না নিয়ে চরম দায়িত্বহীন,স্বেচ্চাচারী মানসিকতা প্রকাশ করছে। সরকারী কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর খাস কালেকশনের নামে অবৈধ পন্থায় সন্দ্বীপের মানুষ কে শোষন করে চলেছে।

আবার কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোর জন্য সন্দ্বীপের অন্যান্য ঘাটের অবকাঠামো যেমন-রাস্তা,উঠানামার জেঠি ইত্যাদি নির্মান না করে প্রায় ঘাটকে চলাচল অনুপযোগী করে রাখা হয়েছে। বছরে যে পরিমান টাকা জেলা পরিষদ সন্দ্বীপের বিভিন্ন ঘাট থেকে আদায় করে তা দিয়ে সকল সকল ঘাটের অবকাঠামো উন্নয়ন করা যায়।কিন্তু তা করা হচ্ছে না।

রাজিবুল আহসান সুমন তার পোস্টে আরো বলেন,আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী ও সমাজকর্মী।৭০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত,সন্দ্বীপের সচেতন মানুষের সংগঠন সন্দ্বীপ এডুকেশন সোসাইটি’র আহবায়ক ও নির্বাচিত সভাপতি।সন্দ্বীপের মানুষের দাবি আদায়ের সংগঠন সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম এর আজীবন সদস্য।বিগত দিনেও ঘাটের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ‘আমরা সন্দ্বীপবাসী’ সংগঠনের মাধ্যমে আন্দোলন করেছি সন্দ্বীপের মানুষের স্বার্থে।কখনো নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করিনি।১০ বছর আগেও যখন আন্দোলন করেছি তখনো কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছিল।সন্দ্বীপ সীমানা রক্ষা আন্দোলন করতে গিয়েও অনেক রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধির চক্ষুশুল হতে হয়েছিল আমাকে।সেদিনও যদি জনপ্রতিনিধি ও সকল রাজনৈতিক নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ হতে পারতো,তাহলে হয়তো আমাদের স্বর্ণদ্বীপ ও ভাসানচর হারাতে হতো না।নতজানু নীতি আর নিজের স্বার্থে কারনে আমাদের অনেকে মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন।তারপরও সরকারি ঘোষনার বিরুদ্ধে ভাষানচর ও স্বর্ণদ্বীপ রক্ষার জন্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আমার পাঠানো স্মারকলিপি মোতাবেক হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে ঢাকা থেকে।তখনো আমাকে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হয়েছিল।আমি আমার গতিতে চলেছি সন্দ্বীপের সকল সামাজিক সংগঠনকে সাথে নিয়ে।এখনো আমি যখন সন্দ্বীপের মানুষের যাতায়াতের প্রধান নৌ রুটের ভাড়া বৃদ্ধি, বিভিন্ন সমস্যা,নৈরাজ্য ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি এবং সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন ও সন্দ্বীপ এডুকেশন সোসাইটি চট্টগ্রাম সহ সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বে আন্দোলন করছি,এখন আবার স্বার্থান্বেষী মহল আগের মতো আমাকে ঘায়েল করার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা,বানোয়াট তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থাপন করে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে এবং আমাকে সন্দ্বীপের মানুষের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন থেকে বিরত রাখার জন্য বিভিন্ন মুখী আক্রমন চলছে। এই ক্ষেত্রে আমার অবস্থান স্পষ্ট-আমি কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে না,কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারাদারের বিরুদ্ধেও আমাদের কোন আন্দোলন নয়।আমাদের আন্দোলন সরকারি নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য।কুমিরা-গুপ্তছড়া সহ সকল ঘাট উম্মুক্তকরনের জন্য।এই আন্দোলনে আমার কোন স্বার্থ নেই।বরং অন্যদের মতো চুপ থাকলে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রিয় থাকতে পারতাম।কিন্তু রাজনৈতিক ও ব্যক্তি সম্পর্কের বাহিরে সন্দ্বীপের মানুষের স্বার্থকে উর্ধ্বে স্থান দিয়ে এই নিরাপদ নৌপথ আন্দোলন করে যাচ্ছি।

এই বিষয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর সাথে যোগাযোগ করলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!