নোয়াখালীতে ২জন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭

0 ১,০০০,০৯৪

নিখোঁজ ছেলেকে ফেরত দেওয়ার কথা বলে প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপরাধে নোয়াখালী হতে ০২ জন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদ্ঘাটন,অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।

র‌্যাব-৭,চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী,ডাকাত,ধর্ষক, র্দুর্ধষ চাঁদাবাজ,সন্ত্রাসী,খুনি,ছিনতাইকারী,অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র,গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

গত ০২ আগস্ট ২০১৭ইং তারিখে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন বাড়বকুন্ড এলাকার জনৈক মোঃ দেলোয়ার হোসেন এর ছেলে মাঈনুল ইসলাম ঈমন(২০) কাউকে কিছু না বলে বাড়ী হতে চলে যায়।দেলোয়ার ছেলে নিখোঁজের পর থেকে বিভিন্নভাবে সন্ধান করতে থাকেন এবং পরবর্তীতে ছেলের নিখোঁজ সংক্রান্তে সীতাকুন্ড থানার একটি সাধারন ডায়েরী দায়ের করেন যার নং- ২২৬ তারিখঃ-০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭।

দীর্ঘদিন ছেলের কোন সন্ধান না পেয়ে দেলোয়ার হোসেন প্রায় দিশেহারা হয়ে ছেলেকে পাওয়ার আশায় যে যা বলত তাই করত।এক পর্যায়ে সে মোঃ জিয়া নামক এক জ্যেতিষির সাথে যোগাযোগ করলে উক্ত জ্যেতিষি তাকে জানায় তার ছেলেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বের করে দিতে পারবে,তবে তার জন্য আগরবাতি,মোমবাতি ইত্যাদি বাবদ ৬৫০/- টাকা লাগবে।দেলোয়ার জ্যেতিষির কথা মতো গত ০৫ অক্টোবর ২০২০ইং তারিখ তাকে বিকাশের মাধ্যমে ৬৫০/- টাকা পাঠান।

পরবর্তীতে ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও বাদীর ছেলে ফিরে না আসায় পুনরায় জ্যেতিষিকে ফোন করলে সে কালক্ষেপন করে আনুমানিক দুইমাস পরে জানায় এটা অনেক কঠিন কাজ তার বড় ওস্তাদ করতে পারবে।তখন ছেলেকে পাওয়ার আশায় দেলোয়ার বড় ওস্তাদের ফোন নাম্বার চাইলে কথিত জ্যেতিষি তার স্ত্রী জোনাকি আক্তার মুক্তাকে বড় ওস্তাদ পরিচয় দিয়া মোবাইল নাম্বার দেয়।

বাদী কথিত বড় জ্যেতিষি জোনাকি আক্তার মুক্তাকে ফোন করলে সে জ্যেতিষি জিয়া এর ভাই জীবনকে দেলোয়ারের ছেলে সাজিয়ে তার সাথে কথা বলিয়ে দেয়।ছেলে হারিয়ে যাওয়ার তিন বছর পর ছেলে পরিচয়দানকারী জীবন ভিকটিমকে জানায় সে ঢাকায় কামরাঙ্গিরচর চাকুরী করছে এবং ভালো আছে।

দুদিন পর পুনরায় দেলোয়ার কথিত জ্যেতিষি জোনাকি আক্তার মুক্তাকে ফোন দিলে সে জানায় তার ছেলের কাছে টাকা নেই তাই বাড়ীতে আসতে পারছে না।দেলোয়ার জিজ্ঞেস করেন তার ছেলে কোথায় তখন জানায় সে কাজে গেছে তার নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দেন।তার কথা মতো ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি তারিখে কথিত জ্যেতিষি জোনাকি আক্তার মুক্তার মোবাইলে দেলোয়ার ১৫০০/- টাকা বিকাশ করেন।এরপরও ছেলে ফেরত না আসায় আবার ফোন করলে সে জানায় ছেলেকে গাড়ীতে তুলে দিয়েছে,কিন্তু ছেলে বাড়ীতে ফিরে আসে নাই।

এরপর দেলোয়ার কথিত জ্যেতিষি জোনাকি আক্তার মুক্তাকে মাঝে মাঝে ফোন করলে সে জানায় তার ছেলে বাড়ীতে চলে যাবে,কাজ করার কথাসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কথা বলে এবং তার ঠিকানা কামারাঙ্গীরচর,ঢাকা বলে জানায়।

দেলোয়ার তার দেওয়া তথ্য মতে ঢাকার কামারাঙ্গীরচরে গিয়ে ছেলের কোন সন্ধান পায়নি। তারপর বিভিন্ন সময় ফোন করলে সে বিভিন্ন কথা বলে।বাদী কোন উপায় না পেয়ে তার ছেলের সন্ধানসহ উদ্ধারের জন্য অবশেষে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম এসে বিষয়টি অবহিত করে।

র‌্যাব-৭,চট্টগ্রাম এর একটি অভিযানিক দল গত ২৩ মার্চ ২০২২ইং তারিখ সকাল ০৭.৩০ ঘটিকায় নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানাধীন এওজবালিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। মোঃ জিয়া(২৫),পিতা-মৃত জেবের আহমেদ এবং ২। জোনাকি আক্তার মুক্তা(১৯),স্বামী- মোঃ জিয়া, উভয় সাং-এওজবালিয়া, থানা-সুধারাম, জেলা- নোয়াখালীকে আটক করে।

পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় উল্লেখিত ঘটনার কথা অকপটে স্বীকার করে।গ্রেফতারকৃত আসামীরা আরো জানায় ভিকটিমের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারকচক্র নিজেদের লোককে তার ছেলে সাজিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল।

প্রতারক চক্র বেদে সম্প্রদায়ের লোক।তারা জায়গা পরিবর্তন করে বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করে।উল্লেখিত আসামীদের নিকট ভিকটিমের ছেলেকে পাওয়া যায়নি এবং ভিকটিমের ছেলের কোন খোঁজ তাদের কাছে নেই।এই প্রতারক চক্র সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাবিজ কবজের দোহাই দিয়ে প্রতারনা করে তাদের টাকা হাতিয়ে নিত।

গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!