সন্দ্বীপ প্রতিনিধিঃ আজ থেকে মাত্র ৭/৮ বছর আগেও সন্দ্বীপে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করনে অনেক কেই রাতে-বিরাতে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে যেতে হতো,এমন কী পথিমধ্যে অনেক প্রসূতি মায়েদের বরণ করতো হতো করুন মৃত্যু। যা ছিলো সন্দ্বীপবাসীদের জন্য করুন এক অধ্যায়।
কিন্তু আজ দিন পাল্টেছে, আজ সন্দ্বীপে সে করুন অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। সন্দ্বীপে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরনের অঙ্গীকার নিয়ে বেসরকারী পর্যায়ে সর্বপ্রথম ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর যাত্রা শুরু হয় সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারের।
সন্দ্বীপের কিছু স্বপ্নবান তরুন ডাক্তার ও অন্যান্য সহযোগী উদ্যেক্তাদের সমন্বিত প্রয়াসে সেনেরহাটের সন্নিকটে হারামিয়া এলাকায় গড়ে ওঠে এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র।
১০ ডিসেম্বর,সকাল সাড়ে ১০ টায় সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টার সংলগ্ন সন্দ্বীপের সেরা বিদ্যাপিঠ আনন্দ পাঠশালার একটি কক্ষে সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারের সাত বছর পূর্তিতে ” মিট দ্য প্রেস ” এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক , সন্দ্বীপের কৃতি সন্তান ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক মেডিকেল কলেজের অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম. মনিরুল আলম তার লিখিত বক্তব্যে এ সব কথা তুলে ধরেন।
এ সময় উপস্থিত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগন ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক, সন্দ্বীপের কৃতি সন্তান ও চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ক্রিটিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফুল আজম সাজ্জাদ, সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও স্বপ্নদ্রস্টা অধ্যাপক আবদুর রহিম, সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কন্ঠের সন্দ্বীপ প্রতিনিধি রহিম মোহাম্মদ, চট্টগ্রামের তাহের- মঞ্জুর কলেজের অধ্যক্ষ ও দৈনিক আজাদীর সাবেক সন্দ্বীপ প্রতিনিধি মুক্তাদের আজাদ খান, বাংলাদেশ সাংবাদিক পরিষদ (বিএসপি) সন্দ্বীপ এর সভাপতি ও দৈনিক সমকাল ও দৈনিক সুপ্রভাতের সন্দ্বীপ প্রতিনিধি ইলিয়াস কামাল বাবু।
মিট দ্য প্রেসে লিখিত বক্তব্যে সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মনিরুল আলম হাসাপাতালের অগ্রগতি ও বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন- হাসপাতাল পরিচালনায় ও রোগীদের সেবায় সার্বক্ষনিক ২ জন গাইনী বিশেষজ্ঞ,১ জন অ্যানেসথেশিস্ট,৪ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছাড়াও আরো রয়েছে – ৮ জন ডিপ্লোমাধারী নার্স ও ব্রাদার,২২ জন এইড নার্স,৪ জন রিসেপশনিস্ট, ৮ জন ওয়ার্ডবয়,৬ জন পরিছন্নতা কর্মী ও ৫ জন নিরাপত্তা কর্মী।এদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ১ জন ম্যানেজার ও ৩ জন সুপারভাইজার
বিগত বছর গুলোতে এ সেন্টারে নিয়মিত ভাবে আউটডোর সেবা,জরুরী সেবা, নরমাল ডেলিভারি,সিজার অপারেশন,বিভিন্ন রকম অপারেশন হয়েছে,যার সেবা কার্যক্রম এখনো দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব মনোভাব নিয়ে চলমান রয়েছে।
এ ছাড়া প্রতি মাসেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে চক্ষু বিশেষজ্ঞ, হাড় জোড়া ও পঙ্গু বিশেষজ্ঞ, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ,বাত,ব্যাথা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারাও আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে। ওষুধের মান সংরক্ষনের জন্য অপরিহার্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা সহ ডিপ্লোমাধারী
ফার্মাসিস্ট রয়েছে,৮% ডিসকাউন্ট দিয়ে রশিদূলে ঔষধ বিক্রয় করা হয়।
এ ছাড়া সন্দ্বীপের মা-বোনদের প্রসব সেবা কার্যক্রম সহজ ও স্বল্পমূল্যে দেয়ার লক্ষ্যে হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাত্র ২০০ টাকা দিয়ে হেলথকার্ড নিলে প্রায় অর্ধেক খরচে বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা সেবা গ্রহন করা যায়।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন- শ্বাসকস্টের রোগীদের চিকিৎসার জন্য বাইপাস রেসপিরেটরি সাপোর্ট সিস্টেম,অতি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য সিরিঞ্জপাম্প সংযুক্ত করা হয়েছে।অপারেশন থিয়েটারের নতুন মাল্টিফাংশনাল ওটি টেবিল ও এরইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি অপারেশন থিয়েটার বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রসব সহায়ক আধুনিক লেবার টেবিল সংযোজন করা হয়েছে। শিশু বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য বেবি ওয়ার্মার ও নতুন এলইডি ফটোথেরাপি মেশিন সংযুক্ত রয়েছে।জরুরী বিভাগের সংকটাপন্ন রোগীর মনিটরিং এর জন্য অটো অক্সিজেন ও রক্তচাপ মাপার আইসিইউ মনিটর সংযুক্ত রয়েছে।ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন স্থাপন করে অনলাইন রিপোটিং সেবা চলছে। সংকটাপন্ন রোগিদের ব্লাড ট্রন্সফারের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ব্লাড ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এর কার্যক্রম চলছে।
ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার মেশিন এবং এক্স-রে আরো উন্নত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতাল ভবনের তলা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সীট সংখ্যা বাড়ানো, রোগিদের সহজ পরিবহনের জন্য লিফট ও র্যামের ব্যবস্থাকরনও রয়েছে। এ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটি সন্দ্বীপেরই সম্পদ,এটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সকলের সুচিন্তিত মতামত, পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করা হয়।
