সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলায় অবৈধভাবে চলছে ১৬টি ইটভাটা।

0 ৬৮৮,১৭২

সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলায় অবৈধভাবে চলছে ১৬টি ইটভাটা।কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে লাইসেন্স বিহীন চলছে ইটভাটা।১৬টি ইট ভাটার একটিরও নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।ব্যহত হচ্ছে চষাবাদ।ধবংস হচ্ছে ফসিল জমী সহ পুকুরের মাছ।সহজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হত-দরিদ্র বেড়ীবাঁধ এলাকা বসতির টিনের চাল।এমতাবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোন পদক্ষেপ।প্রশাসনের নিরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে জন-মনে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে,১৬টি ইট ভাটার মধ্যে কোনটারই কাগজপত্র নেই।ইয়েস,আর বি বি,মাম,মাম-২,রয়েল,এম টি টি,ম্যাক্স,এ বি সি,জি আর এম,বি ডি বি,তাজ,আকাশ নামের এই ব্রিকসগুলো আইনের তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে নিজেদের খেয়াল খুশি মতে।এমনকি এইসব ইটভাটায় ইট তৈরি করার মাটি গুলোও কাটা হচ্ছে সরকারি খাস জমি,সরকার খাল ও ফসলি জমি থেকে।রাস্তার পাশে স্কুল,কলেজের পাড় ঘেঁসে, লোকালয়ে,ফসলি জমির উপর এই সব ভাটা গড়ে উঠেছে।চব্বিশ ঘন্টাই চলতে থাকে ভাটার চুল্লী।সেই ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।যা পুরো সন্দ্বীপবাসীকে ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে।

সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলার এইসব ইট ভাটায় প্রকাশ্যে চলছে কাঠ পুড়ানোর মহা উৎসব।সেই সাথে চলছে অবৈধ ভাবে ইট ভাটার ব্যবসা।হুমকিতে লোকালয় ও কৃষিজমি। সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে তৈরি হচ্ছে নানা প্রশ্ন।

অপরদিকে ইট ভর্তি ট্রাক সড়কে চলার কারণে ৫০ বছর টেকসই রাস্তা এখন ২ বছরও টেকসই হচ্ছে না।সন্দ্বীপের রাস্তা গুলো অবৈধ ট্রাক চলাচলের কারণে বেশিরভাগ রাস্তার অবস্থা খারাপ।রাতদিন ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তার টেকসইও কমে যাচ্ছে অন্যদিকে যানজট তৈরি হচ্ছে।

সন্দ্বীপ উপজেলার বেশিরভাগ ইট ভাটাই স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের।রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ফসলী জমিতে গড়ে তুলেছে অবৈধ ইটভাটা।অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে তিন ফসলী জমির মাটি।এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে জমির পরিমাণ।দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।হতে পারে খাদ্য ঘাটতিও।পরিবেশের আইন লঙ্ঘন করে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই সন্দ্বীপ উপজেলায় ১৬টি ইটভাটায় গড়ে উঠার পিছনের কারণ হিসাবে দায়ী করা যায় সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনের নিরব ভূমিকা।

কাগজপত্র বিহীন অবৈধ ক্ষমতার বলে অধিকাংশ ইটভাটার মালিকেরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রসাশনের সাথে হাতহাত করে গড়ে তুলেছেন অবৈধ ইটভাটা।আর এই অবৈধ ইটভাটা থেকে টাকার বিনিময়ে বৈধতা দিয়েছে ইটভাটার মালিক সমিতির সদস্যরা।ইটভাটা মালিক সমিতি মাধ্যমে সবকিছু মেনেজ করা হচ্ছে বলে ইটভাটা মালিকদের দাবি।

এদিকে সরেজমিনে ইটভাটার মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,ইটভাটার কোন বৈধ কাগজপত্র নেই।ইটভাটা মালিক সমিতির মাধ্যমে,সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনকে মেনেজ করে চলছে এইসব ইটভাটা।প্রত্যেকটি ইটভাটায় পুড়ানো হচ্ছে কাঠ।এইসব বিষয়ে জানতে মালিক সমিতির কাছে যেতে বলেন তারা।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন(২০১)ধারায় সম্পূর্ণভাবে উল্লেখ আছে,জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ব্যতিত কোন ব্যক্তি ইটভাটা প্রস্তুত করতে পারবে না।ঐ আইনে আরও উল্লেখ করা আছে যে তিন কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ী ঘর ও বসতি এলাকা ফলজ ও বনজ-বাগান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলে ইটভাটা অনুমোদন হবে না।কিন্তু সন্দ্বীপ উপজেলায় সেই আইনের তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে ১৬টি ইটভাটা যেগুলো মানুষের বসতি বাড়ী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ফলজ ও বনজ বাগানের নিকটে গড়ে উঠেছে।ফলে মানুষ ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে।

অবৈধ ইটভাটার সম্পর্কে জানতে সন্দ্বীপ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের জানান,উপজেলায় ১৬টি ইটভাটা রয়েছে তার মধ্যে আমাদের মালিক সমিতির অধীনে ১৪টি আছে বাকী ২টা নতুন হয়েছে।আমাদের কোন ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই।আমাদের ইটভাটা অবৈধ এটা প্রশাসন জানেন।সন্দ্বীপ ১৬টি ইটভাটার কোনোটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।

অবৈধ ইটভাটার সম্পর্কে জানতে সন্দ্বীপ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মগধরা ইউপি চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।অনেকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অবৈধ ইটভাটা সম্পর্কে জানতে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসার মোবাইল ফোনে বার বার ফোন দেওয়ার পরেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সন্দ্বীপের এমন অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠার কারণে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি অন্যদিকে তেমন নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।ইটভাটার ধোঁয়ায় জনজীবন আজ হুমকির মুখে।এর থেকে প্রতিকার চাই জনগণ,চাই প্রশাসনের সুদৃষ্টি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!